জ্বর কি?
জ্বর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা-
রোগ বিবরন : অতিশয় উত্তাপ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম।
অপরিমিত আহার বিহার, অন্ত্রে কৃমি, রাত্রি জাগরন, ঋতু পরিবর্তন, ঘর্ম রোধ, জলে ভিজা, ভয় পাওয়া প্রভূতি কারনে জ্বর হইতে পারে।
জ্বর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
একোনইট ন্যাপ (Aconite Nap) :
হঠাৎ জ্বরের আক্রমন, ঘর্মবিহীন অবিরাম জ্বরে অন্তঃদাহ অস্থিরতা ছটফটানি, প্রবল পিপাসা, অধিক পরিমাণে ঘন ঘন জল পান। বারে বারে এপাশ ওপাশ করা মৃত্যু ভয় ইত্যাদি লক্ষনে ইহা উপকারী।
বেলেডোনা (Belledona) :
চোখ, মুখ, লাল প্রচন্ড মাথা ব্যথার সহিত ভীষন জ্বর গা অত্যন্ত গরম একটু তন্দ্রা ভাব আসিলেই চমকাইয়া উঠে। স্বল্প বিরাম জ্বর মধ্যে গরম ঘাম।
জেলসিমিয়ম (Gelsemium) :
সকল প্রকার জ্বরে রোগী নিশ্চুপ হইয়া পড়িয়া থাকে। ডাকিলে সাড়া দেয় না। পায়ের তলা ঠান্ডা মাথা গরম অত্যন্ত দুর্বল তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়া থাকে।
মাঝে মাঝে চমকাইয়া উঠে। জল পিপাসা বড় একটা থাকে না।
ব্রায়োনিয়া(Bryonia Alb) :
অবিরাম সবিরাম যে কোন প্রকারের জ্বরেই হোক, লক্ষন মিলিলে ব্রায়োনিয়া প্রয়োগ করা যায়। সর্বাঙ্গে বেদনা, কাশি, রোগী চুপ করিয়া পড়িয়া থাকে নড়াচড়া করিতে চায় না। নড়াচড়ায় তাহার সকল যন্ত্রনার বৃদ্ধি। কোষ্ঠবদ্ধ জিহ্বা হরিদ্রা বা সাদা বর্ণ। প্রবল পিপাসা, অনেক বিলম্বে অধিক পরিমানে জল পান করে, মাঝে মাঝে প্রলাপে বাড়ী যাইবার কথা বলে।
রাস টক্স (Rhus Tox) :
ঠান্ডা লাগিয়া, জলে ভিজিয়া, ভিজা সেতসেত স্থানে বাস করিয়া সর্দি কাশি, জ্বর, গাত্র বেদনা, রোগী সর্বদা এপাশ ওপাশ ও ছটফট করে।
চুপ করিয়া থাকিলে তাহার সকল যন্ত্রনা বৃদ্ধি।
ব্যাপটিসিয়া (Baptisia) :
টাইফয়েড জ্বরে এই ঔষধ প্রয়োগ করিয়া আমি বহু রোগী আরোগ্য হইতে দেখিয়াছি। সকাল বেলা জ্বরের ভাগ কম। সমস্ত দিন রাত্রি ভীষন জ্বর মাঝে মাঝে জল পিপাসা।
পায়খানা, প্রস্রাব, ঘর্ম, শ্বাস প্রশ্বাসে ভীষন দুর্গন্ধ, শরীরে ব্যথা বিছানা শক্ত বোধ করে। তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়া থাকে। বিড় বিড় করিয়া বকে, ইত্যাদি লক্ষনে ব্যাপটিসিয়া উপকারী।
ইপিকাক (Ipecac) :
যে কোন জ্বরের সহিত বমি বা বমি বমি ভাব অর্থাৎ গা বমি বমি জ্বর আসিবার পূর্বে রোগীর হাই উঠে। জ্বরের সময় রোগী চুপ করিয়া পড়িয়া থাকে।
ইপিকাকের জিহ্বা প্রায় পরিস্কার থাকে, মাথা নীচু করিলে বমির ভাব আরো বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি লক্ষনে ইপিকাক অব্যর্থ।
সিনা (Cina) :
ক্রিমিগ্রস্ত শিশুদের জ্বর প্রায়ই বিকাল বা সন্ধ্যায় আসে। খিট খিটে মেজাজ, ঘুমের ঘোরের চিৎকার দিয়া উঠে।
দাত কাটে নাক খোঁটে ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান করে।
পালসেটিলা (Pulsatilla) :
হাত, পা, চক্ষু জ্বালার সহিত প্রায়ই বিকালে জ্বর আসে। মুখ শুকাইয়া যায়। তবু জল পিপাসা হয়না।
শান্ত, স্বভাব, কোমল মন, গরমে কাতর, খোলা বাতাস পছন্দ করে এই ধাতুর রোগীতে ইহা অধিক উপযোগী।
হেলিবোরাস (Heleborus) :
বিকাল ৪ টা হইতে রাত ৮ টায় জ্বরের বৃদ্ধি। অজ্ঞান ভাবে পড়িয়া থাকে। ডাকিলে সাড়া দেয় না।
মুখে জলের পাত্রটি ধরিলে হা করিয়া জল পান করে।
কোন কিছু চিবাইবার মত মুখ নাড়ে। বিছানা খোঁটে দাঁত কড়মর করে। মাঝে মাঝে একদিকের হাত পা নাড়ে। অন্যদিকের হাত পা স্থির ভাবে পড়িয়া থাকে।
এসিড মিউর (Acid Mur) :
টাইফয়েড জ্বরের বিকার অবস্থায় বাহ্যি প্রস্রাব অসাড়ে হয় বিড় বিড় করিয়া থাকে।
মুখে দুর্গন্ধ ঘা, দাঁতে ময়লা।
অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া থাকে। অত্যন্ত দুর্বল। বালিশ হইতে মাথা গড়াইয়া পড়ে। নীচের চোয়াল ঝুলিয়া যায়। এক দৃষ্টি চাহিয়া থকে।
বাইকেমিক চিকিৎসা
ফেরাম ফস সর্ব প্রকার জ্বরের প্রথমবস্থায় ফেরাম ফস উৎকৃষ্ট ঔষধ। কোষ্টবদ্ধ জিহ্বায় সাদা প্রলেপ শরীর বেদনা ইত্যাদি লক্ষনে উক্ত ঔষধের সংগে ক্যালি মিউর পর্যায় ক্রমে সেবন করিতে হয়।
নেট্রাম মিউর জ্বর আসিবার পূর্বে মাথা ব্যথা ও জল পিপাসা হইতে থাকে। শীত করিয়া কম্প দিয়া বেলা ১০ টা, ১১ টা কিংবা বিকালে জ্বর আসে। নিম্ন ঠোঁটের মধ্যে ভাগ ফাঁটা ফাঁটা, জ্বর ঠুঁটো।
ক্যালি সালফ হাত, পা জ্বালার সহিত ঘর্ম বিহীন জ্বর। জ্বর সন্ধ্যায় বৃদ্ধিতে ইহা অমোঘ।
ক্যালি ফস টাইয়েড জ্বরে রোগী অত্যন্ত দুর্বল, অনিদ্রা, পেট ফাঁপা, বাহ্যে প্রস্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ জিহ্বা শুস্ক মুখে দুর্গন্ধ ইত্যাদি লক্ষনে ইহা অব্যর্থ।
নেট্রাম সালফ ঠান্ডা আবহাওয়ায় কিংবা বর্ষা কালে জলে ভিজিয়া অবিরাম জ্বরে শরীরের টাটানী ব্যথায় ইহা উপকারী।
পথ্য আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা
জ্বর কালীন রোগীকে অধিক নড়াচাড়া বা স্থানান্তরে যাইতে দেওয়া উচিত নয়।
পেটে গন্ডগোল থাকিলে জল বার্লি, জল সটি দেওয়া ভাল।
কোষ্ঠবদ্ধ থাকিলে দুধ, সাগু বিভিন্ন ফলের রস দেওয়া যাইতে পারে।
জ্বর সম্পূর্ণ ত্যাগ হইয়া গেলে ভাত মাছ, দুধ, মাংস ইত্যাদি দেওয়া যায়।
বিঃদ্রঃ- ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খেয়ে বিপদ ঢেকে আনবেনা।অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন