মেডোরিনাম একটি নোসোড এবং হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পলিক্রেষ্ট ঔষধ। গনোরিয়া ভাইরাস থেকে এটি প্রস্তুত করা হয়। মেডোরিনাম হল সাইকোটিক মায়াজমের জীবন্ত প্রতিরূপ। জীবনে যে বয়সে সংগ্রাম করার ক্ষমতা, মনোভাব লক্ষিত হয় তখন সোরা কিন্তু যখন মোকাবেলা করার মনোভাব হারিয়ে আপোস করে চলার মনোভাব এসে যায় তখন সেটাকে সাইকোসিস অবস্থা বলতে পারেন। সুস্থ প্রতিযোগীতা বাদ দিয়ে নীতিহীন ভাবে জেতার বা টিকে থাকার চেষ্টা হচ্ছে সাইকোসিস। সোরা হচ্ছে সাইকোসিসের মা। একজন সুস্থ যুবক অবৈধ মেলামেশার ফলে গনোরিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত সারার জন্য ইঞ্জেকশনের মতো ভুল চিকিৎসায় সুস্থ্যতার নামে সাইকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে দৈহিক ও মানসিক সকল ক্রিয়াসমূহে অত্যন্ত দুর্বলতা দেখা দেয়।
মেডোরিনাম উৎসঃ
নোসোড।
প্রুভারঃ ডা. সোয়ান অতঃপর ডা. এলেন,
রেনডেল, ফিংক, নর্টন, ফ্যারিংটন, ফ্রন্ট।
মায়াজমঃ এন্টিসোরিক, এন্টিসাইকোটিক,
এন্টিসিফিলিটিক, এন্টি-টিউবারকুলার।
কাতরতাঃ প্রথম অবস্থায় গরমকাতর।
টিউবারকুলার অবস্থায় শীতকাতর
(পরিণতির কারণে শীতকাতর হয়ে পড়ে)
পার্শ্বঃ উপরে ডানপার্শ্ব, নিচে বাম পার্শ্ব।
নির্দেশক / চরিত্রগত লক্ষণঃ
১. বংশগত প্রমেহদোষ ও উপযুক্ত ঔষধের
ব্যর্থতা।
২. জ্বালা, ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা।
৩. ব্যস্ততা ও ক্রন্দনশীলতা।
৪. সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মেডোরিনামের
বৃদ্ধি। পাখার বাতাস ভালো লাগে। সকালে
খারাপ থাকে, বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত খুব
ভালো থাকে।
৫. গনোরিয়ার প্রাথমিক অবস্থা অপেক্ষা
গনোরিয়ার কুফল বা গনোরিয়ার গৌণ
অবস্থায় মেডোরিনাম অধিক ফলপ্রদ।
৬. হাতে পায়ে জ্বালা, ব্রক্ষতালুতে জ্বালা,
প্রদাহযুক্ত স্থানে জ্বালা, হিমাঙ্গ অবস্থাতেও
জ্বালা।
৭. মেডোরিনাম অত্যন্ত গরমকাতর বটে কিন্তু
অবস্থা বিশেষে বাতের ব্যথা গরম প্রয়োগেই
প্রশমিত হয়।
৮. মেডোরিনামের পায়ের তলাটি বড়ই
স্পর্শকাতর হয় যাহার ফলে সে হাটিতে পারে
না। ইহার পায়ের তলায় যে কড়া হয় তাহা
অতীব স্পর্শকাতর।
৯. মেডোরিনামের একটি বিশেষ লক্ষণ হাটু এবং
কনুইয়ে ভর করে থাকলে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ
হ্রাস পায়।
১০. সাইকোসিসের পীড়া দিনের বেলায় বৃদ্ধি পায়,
গ্রীষ্মকালে বৃদ্ধি পায় কিন্তু বর্ষাকালে এই
রোগী অনেকটা ভালই থাকে তাহার বাত
পীড়াটি ব্যতীত।
১১. মেডোরিনাম থুজার চাইতে খোলামেলা, বেশি
বেহায়া।
১২. দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দিলে সমস্যা, কারণ
এদের সব কিছুতে তাড়াহুড়া। রোগ সারতে
দেরি হলে অধৈর্য্য হয়ে যায়, দ্রুত ফল চায়।
১৩. কোন শিশু বিকলাঙ্গ বা নির্বোধ হলে যদি
দেখা যায় সেই শিশুর বাবা মা বিশেষ করে মা
গরমকাতর, পিপসা বেশী, ঘাম বেশী, পাখার
বাতাস খুব পছন্দ করে তবে সেই শিশুকে
মেডোরিনাম দিলে দারুণ কাজ করে।
১৪. মেডোরিনামের শিশু গ্রীষ্মকাল আসিলেই
নানাবিধ পেটের পীড়ায় কষ্ট পাইতে থাকে।
১৫. সারা শরীরে চুল, লবণ, ঝাল, টক, মিষ্টি, চর্বি
একযোগে পছন্দ হলে মেডোরিনাম ভাবুন।
চরিত্রগত লক্ষণঃ
১৬. খুব সতর্ক দৃষ্টি। মুখ মন্ডল তৈলাক্ত,
চকচকে।
১৭. অবরুদ্ধ প্রমেহের কুফলে বাত হইলে ইহা
একটি প্রথম শ্রেণীর ঔষধ।
১৮. মাথা ঘোরা এত প্রবল যে প্রায় প্রত্যেক
রোগীর মধ্যে ইহা বর্তমান থাকে।
১৯. মেডোরিনামের রোগীর বজ্রপাতের সময়
তাহার পদদেশে একটা বেদনা অনুভূতি হয়।
২০. সমুদ্র তীরে তাহার স্বাস্থ্যের উন্নতি।
২১. খুব বেশি পিপসা কিন্তু জ্বরের কোন অবস্থায়
পিপাসা থাকে না।
২২. প্রচণ্ড ক্ষুধা। সে খায় দায় অথচ শুকিয়ে যায়।
২৩. সহজে ঠাণ্ডা লাগে, সর্দি তাহার নাসিকাতে
সর্বদাই থাকে। শীতকালে পায়ের তলায় ঘর্ম
হয়।
২৪. মাসিকের সময় প্রচণ্ড কষ্ট হয়, যৌনসম্ভোগে
কোন আনন্দ পান না, দেহে ও মনে শুধু
কষ্ট আর যন্ত্রণা।
২৫. ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ, শয্যা মূত্র, ক্ষীণ মূত্র ধারা,
অতি মূত্র বা ডায়াবেটিকস।
২৬. প্রচণ্ড কোষ্ঠকাঠিন্য, পিছন দিকে অনেকটা
হেলে চাপ দিলে তবে মল ত্যাগ হয়।
২৭. গাড়ী বা নৌকা ভ্রমনে শিরপীড়া ও গা বমি
বমি ভাব।
২৮. মাদকাশক্তি নিরসনে এটি একটি উপকারী
ঔষধ।
২৯. স্রাবের দাগ কাপড় হইতে ধুইয়া ফেলিলেও
উঠিতে চাহে না।
৩০. এই রোগীর হিমাঙ্গ অবস্থায় ঘর্ম হইতে থাকে
তবুও বাতাস চায়।
৩১. চক্ষু প্রদাহে আলোক একেবারে অসহ্য।
৩২. মেডোরিনামের রোগী হাঁটুর উপর ভার দিয়া
বালিশে মুখ গুঁজিয়া শুইলে উপশম। বাতের
ব্যথা নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত স্থান
টিপিয়া দিলে উপশম।
৩৩. ঘন ঘন স্বপ্নদোষ, ধাতুদৌর্বল্য, ধ্বজভঙ্গ
পীড়াতে ইহার ব্যবহার বড়ই ফলপ্রদ।
মেডোরিনাম মানসিক চরিতগতঃ
১. স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল যে, কথা কহিতে কহিতেই
ভুলিয়া যায় সে কি বলিতেছিল। বহু পরিচিত
লোকের নাম বা ঠিকানা মনে থাকে না। কখনও
কখনও রোগী নিজের নাম ভুলে যায়।
২. মেডোরিনাম রোগ যন্ত্রণায় অস্হির হইয়া এবং
মৃত্যুভয়ে কাতর হইয়া কাঁদিতে থাকে, প্রার্থনা
করিতে থাকে। ব্যাকুলতা, উদ্বেগ ও আশঙ্কা।
৩. রোগী না কাঁদিয়া বা চক্ষুর জল না ফেলিয়া
কিছুই বলিতে পারে না।
৪. অত্যন্ত বাচালতা। শরীরের সর্বত্র পোকা হাঁটার
অনুভূতি।
৫. যেন কেহ তাহার পিছনে দাঁড়াইয়া আছে, যেন
কেহ ফিস-ফিস করিয়া তাহাকে কি বলিতেছে।
যেন কেহ তাহাকে আসবাবপত্রের পিছন থেকে
দেখছে।
৬. শিশুরা গায়ে হাত দেওয়া পছন্দ করে না।
৭. অযোগ্যতাকে ঢেকে রাখার জন্য মনে উদ্বেগ
কাজ করে তখন উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ
সারাক্ষণ পা নাড়ায় বার বার হাত ধোয়।
টেনশন হলে বার বার দাঁত দিয়ে নখ কাটে। মনে
অপরাধ বোধ কাজ করে বার বার হাত পরিষ্কার
করার মধ্য দিয়ে এটা প্রকাশ পায়।
৮. এদের মেজাজ কর্কশ, অহংকারী, স্বার্থপর ও
কৃপণ, সমালোচনা দিয়ে নিজের দুর্বলতাকে
আড়াল করার চেষ্টা করে।
মানসিক চরিতগতঃ
৯. কারো সাথে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা
থাকলে, যতোক্ষণ সে মানুষের সাক্ষাত না হয়
ততোক্ষণ এরা অস্হির হয়ে থাকে পায়চারী
করতে থাকে দেখা হলে সব ঠিক।
১০. অন্যমনষ্ক থাকে ফলে হঠাৎ কোন শব্দ হলে
বা ধাক্কা লাগলে চমকে উঠে। এই রোগীর
পীড়ার কথা মনে পড়িলে বৃদ্ধি।
১১. এরা যেমন নিষ্ঠুর হয় তেমনি দয়ালু,
অতিথিপরায়ন হয়। স্নানে ইচ্ছা।
১২. যেহেতু সারাক্ষণ ক্ষতির আশঙ্কায় থাকে তাই
ভয়ের স্বপ্ন দেখে, কুকুর, সাপ কামড়াচ্ছে
ইত্যাদি।
১৩. এই ঔষধের কোন কোন রোগী সহজেই
রাগান্বিত হয় আবার কোন কোন রোগী
পালসের মত অতিশয় বিনয় নম্র এবং শীতল
মেজাজের হইয়া থাকে।
১৪. দ্রুত কথা বলে বা কাজ করে। হিংস্র, নীচ
মন, কঠোর আবেগ প্রবণ।
১৫. বজ্র, ভূত, প্রেত, জীন প্রভৃতি এবং অন্ধকার
রাত্রির ভীতি তাহার মধ্যে অতি উত্তমরূপেই
লক্ষিত হয়।
ইচ্ছাঃ লবন, ঝাল, মিষ্টি, তামাক, উত্তেজক পদার্থ
বৃদ্ধিঃ ঠাণ্ডায়, দিবাভাগে, সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত, ভোর ৩ – ৪ টায়, স্পর্শে, বন্ধ ঘরে,
রোগের চিন্তায়, বজ্রপাতে ও ঝড়ের পূর্বে।
হ্রাসঃ মুক্ত হাওয়ায়, সূর্যাস্তে, পেটের উপর শয়নে,
পিছনে বাঁকলে, পাখার বাতাসে, খুব জোরে
ঘর্ষণে, সমুদ্রতীরে।
সতর্কতাঃ
১. ডা. বোরিক বলেন – এই নোসোড ঔষধটি
অবশ্যই ঘনঘন পুনঃপ্রয়োগ করবে না।