অল্প বয়স্কদের ওষুধ শ্বেতপ্রদর রোগের যে সকল লক্ষণ সংগ্রহ করেছি, সে সকল লক্ষণগুলোর আলোকে এই ৮টি ওষুধকে আলাদা করার চেষ্টা করবো।
১. প্রথমে শ্বেতপ্রদর রোগের লক্ষণগুলোর আলোকে অল্প বয়স্কদের ওষুধগুলোকে আলাদা করার চেষ্টা করতে হবে।
২. তারপর রোগীর সার্বদৈহিক ও সাধারণ লক্ষণের আলোকে আরও পার্থক্য করার চেষ্টা করতে হবে।
৩. অল্প বয়স্কদের ওষুধ ক্ষেত্রেও বড়দের মতো লক্ষণ সংগ্রহ করা সম্ভব, বড়দের চেয়ে ছোটদের রোগীলিপির ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাহলেই অল্প বয়স্কদের ওষুধ বাছাই করার মতো লক্ষণ পাওয়া যাবে।
যেমন-
১. Calc Carbonica (ক্যালকেরিয়া কার্বোনিকা)
শ্বেতপ্রদর :
১। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ২। হলদে ৩। এলবুমেনযুক্ত ৪। অবিদাহী ৫। রক্তাক্ত ৬। জ্বালাকর ৭। প্রভূত ৮। ক্রিমের ন্যায় ৯। অল্পবয়স্কা বালিকার ১০। বেগে নির্গত হয় ১১। ঋতুস্রাবের পূর্বে, পরে উভয় ঋতুর মধবর্তীকালে ১২। দুধের মতো ১৩। দুর্গন্ধ ১৪। পুঁজের ন্যায় ১৫। ঘন ১৬। স্বচ্ছ ১৭। ভ্রমণে বৃদ্ধি ১৮। সাদা।
ওষুধের নিজস্ব কথা- দেহের স্থুলতা শিথিলতা ও শ্লেষ্মা প্রবণতা। ভীরুতা ও ভ্রান্তধারণা। মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায় ও অল্পে ঠান্ডা লাগে। ডিম খাবার প্রবল ইচ্ছা কিন্তু দুধ সহ্য করতে পারে না।
২. Cannabis Sativa (ক্যানাবিস স্যাটাইভা)
অল্প বয়স্কদের ওষুধ শ্বেতপ্রদর :
১। অল্প বয়স্কা বালিকার ২। গনোরিয়াজাত।
ওষুধের নিজস্ব কথা- প্রমেহ মূত্রত্যাগান্তেজ্বালা। ঘন পীতবর্ণ
পুঁজস্রাব। জ্বালা মূত্রমার্গের মুখ হতে মুত্রাশয় পর্যন্ত।
অত্যধিক কামোম্মত্ততা, ধ্বজভঙ্গ।
মূত্রমার্গ অত্যন্তস্পর্শাধিক্য, স্পর্শ করা যায় না।
শ্বাসকষ্ট দাড়ালে সহজবোধ করে। ভীষণ কোষ্টকাঠিন্য মূত্র অবরোধ।
৩. Cubeba Officinalis (কিউবেবা অফিসিন্যালিস)শ্বেতপ্রদর :
১। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ২। প্রভূত ৩। অল্প বয়স্কা বালিকার ৪। সবুজাভ ৫। ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে। ৬। দুর্গন্ধ ৭। হলদে।
ওষুধের নিজস্ব^ কথা- পাগলের মত কার্য্য কলাপ, সবকিছু ভেঙ্গে ফেলে, থুথু দেয়।
অতি সহজে ভীত হয়। ঘুমের মধ্যে উঠে বসে ও কথা বলে।
মূত্রনালী ও যৌনদেশের প্রদাহে তীব্র বেদনা।
শরীরে আমবাত ভীষণ চুলকানি।
বালিকা দিগের খুব ঝাঁঝালকর প্রদরস্রাব।
৪. M.I.F (মার্কবিন আয়োড ফ্লেভাম)
শ্বেতপ্রদর : (১)
১। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ২। অল্প বয়স্কা বালিকার ৩। পুঁজের ন্যায় ৪। হলদে।
ওষুধের নিজস্ব^ কথা- ডান দিকে টনসিল বৃদ্ধি, জিবের গোড়ায় পুরু হলদে ময়লা, অপর অংশ পরিষ্কার।
কেরানী বা লেখকদের হাতের আঙ্গুল খিলধরা।
স্তনের টিউমার, শক্ত, তৎসহ প্রচুর তপ্ত ঘর্মস্রাব।
ঘাড়ের গ্রন্থি ফুলিয়া উঠে, গলায় আঠার ন্যায় শ্লেষ্মা জমে থাকে।
৫. Mercurius Vivus (ভাইবাস) (মার্ক-সল)
শ্বেতপ্রদর : (৩)
১। সন্ধ্যাকালে ২। রাত্রে ৩। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ৪। অবিদাহী ৫। রক্তাক্ত ৬। প্রভূত ৭। অল্প বয়স্কা বালিকার ৮। সবুজাভ ৯। দলাদলা ১০। ঋতুস্রাবের সময়ে, পরে ১১। পুঁজের ন্যায় ১২। পাতলা, জলের ন্যায় ১৩। সাদা ১৪। হলদে।
ওষুধের নিজস্ব কথা- অতিরিক্ত ঘর্ম, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ ও অতিরিক্ত পিপাসা। জিহŸা পুরু ও দাঁতের ছাপ যুক্ত। দুর্গন্ধ ও ডান পার্শ্বে চেপে শুতে অসুবিধা। উভয় কাতরতা। রাত্রে বৃদ্ধি, শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি, ঘর্মাবস্থায় বৃদ্ধি।
৬. Pulsatilla Nigricans (পালসেটিলা নাইগ্রীকেন্স)
শ্বেতপ্রদর : (৩)
১। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ২। অবিদাহী ৩। জ্বালাকর ৪। প্রভূত ৫। হলদে ৬। ক্রিমের ন্যায় ৭ । অল্পবয়স্কা বালিকার ৮। গনোরিয়াজাত ৯। সবুজাভ ১০। শায়িত অবস্থায় ১১। হস্তমৈথুনজনিত ১২। ঋতুস্রাবের পূবের্, ঐ সময়ে, পরে ১৩। দুধের বর্ণ ১৪। গর্ভকালে ১৫। কামোত্তেজনা হতে ১৬। ঘন ১৭। পাতলা জলের ন্যায় ১৮। সাদা।
ওষুধের নিজস্ব কথা- পরিবর্তনশীলতা। নম্রতা ও ক্রন্দনশীলতা। তৃষ্ণাহীনতা। গরমে বৃদ্ধি ও গাত্র সর্বদা উত্তপ্ত।
৭. Senecio Aureus (সেনেসিও অরিয়াস)
শ্বেতপ্রদর : অল্পবয়স্কা বালিকার।
ওষুধের নিজস্ব কথা- ঋতুস্রাবের পরিবর্তে রক্তকাশ।
রক্তস্রাব জনিত শোথ।
স্বল্প রজোরোগে উহা বর্ধিত করে ও অতিরিক্ত রজঃস্রাবে হ্রাসপ্রাপ্ত এবং কষ্ট রজঃরোগের যন্ত্রণা উপশমিত হয়।
রজঃস্রাবের পরিবর্তে অথবা মূত্রদোষ সহ শ্বেতপ্রদর।
৮. Sepia Officinalis (সিপিয়া অফিসিন্যালিস)
অল্প বয়স্কদের ওষুধ এর শ্বেতপ্রদর :
১। শ্বেতপ্রদর ২। কেবলমাত্র দিবাভাগে ৩। প্রাতে ৪। বিদাহী, ছাল উঠে যায় ৫। এলবুমেনযুক্ত ৬। অবিদাহী ৭। রক্তাক্ত ৮। জ্বালাকর ৯। সঙ্গমের পর ১০। প্রভূত ১১। ক্রিমের ন্যায় ১২। কাঁচা মাংসের বর্ণ ১৩। অল্প বয়স্কা বালিকার ১৪। গনোরিয়াজাত ১৫। সবুজাভ জলবৎ ১৬। বেগে নির্গত হয় ১৭। জেলির ন্যায় ১৮। দলাদলা ১৯। ঋতুস্রাবের পূর্বে, উভয় ঋতুর মধ্যবর্তীকালে, ঋতুস্রাবের পরিবর্তে ২০। দুধের বর্ণ ২১। দুর্গন্ধ, সন্ধ্যাকালে, পচা ২২। গর্ভকালে ২৩। পুঁজের ন্যায় ২৪। ঘন ২৫। পাতলা জলের ন্যায় ২৬। স্বচ্ছ ২৭। ভ্রমণে বৃদ্ধি ২৮। সাদা ২৯। হলদে।
ওষুধের নিজস্ব কথা- বিষন্নতা, ক্রন্দণশীলতা ও উদাসীনতা। অতিরিক্ত রক্তক্ষয় বা অতিরিক্ত স্বামী সহবাস কিম্বা অতিরিক্ত গর্ভধারণ জনিত জরায়ুর শিথিলতা। উদরে শূন্যবোধ, মলদ্বারে পূর্ণবোধ। পরিশ্রমে উপশম এবং স্নানে অনিচ্ছা।
উপরের চেষ্টায় ফলেও যদি ওষুধ আলাদা করা সম্ভব না হয়, তাহলে এবার রোগীর মানসিক লক্ষণ,
জিহবার লক্ষণ, পার্শ্ব, গঠন, মল, মূত্র, শয়ন ও নিদ্রা, স্বপ্ন, ঘর্ম, স্নান, কাতরতা, পিপাসা, ক্ষুধা, ইচ্ছা, অনিচ্ছা,
অসহ্য খাদ্য, উপযুক্ত খাদ্য, মায়াজম, সার্বদৈহিক হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদি সংগ্রহকৃত লক্ষণ দিয়ে ওষুধ আলাদা করতে হবে।
যতই সময় লাগুকনা কেন, রোগীকে সম্পূর্ণ সদৃশ্য একটি ওষুধ বাছাই করে দিতে হবে।
এখানে আমি রোগীর শ্বেতপ্রদরের কথা উল্লেখ করেছি, প্রকৃত পক্ষে এই নিয়ম বাচ্চাদের যে কোন রোগের ওষুধ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বিঃদ্রঃ- ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খেয়ে বিপদ ঢেকে আনবেনা।অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন