হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অপছন্দকারীর ঔষধ নির্বাচনের সহজ কৌশল কি?
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অপছন্দকারীর ঔষধ নির্বাচনের সহজ কৌশল নবশিক্ষার্থী ভাই-বোন আজ আপনাদের সাথে একটা মজার থিম, আমার ও মনীষীদের অভিজ্ঞান শেয়ার করতে চাই। পূর্ণাঙ্গ কেস টেকিং এর ভিত্তিতে যার জন্য যে ঔষধ নির্বাচন হবে তাকে সেটাই দিতে হবে এটিই হোমিওপ্যাথি।
ডা. কেন্ট বলেন যখন তুমি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শুনে একটি ঔষধ নির্বাচন করার দক্ষতা অর্জন করবে তখন বুঝবে মেটেরিয়া মেডিকা আয়ত্ত করতে পেরেছ। তবে যারা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বিশ্বাস করে না বা পছন্দ করে না কিন্তু বেকায়দায় পড়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার জন্য এসে বলে সে হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে না। তাদের ঔষধ নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু মজার কৌশলযুক্ত তথ্য দিতে চাই।
আজকের আলোচনা: লাইকোপোডিয়াম
হোমিওপ্যাথি ঔষধ বিশ্বাস বা পছন্দ করে না এই লক্ষণের উপর ভিত্তি করে এদের জন্য ঔষধ নির্বাচন আমার মনে হয় অর্ধেকটা সহজ হয়ে যায়, এই জন্য যে- হোমিওপ্যাথি পছন্দ বা বিশ্বাস করে না এমন মানুষদের জন্য রেপার্টরিতে মাত্র ৬ টি ঔষধ পাওয়া যায়। যথা:
কস্টিকাম, হিপার-সালফ, লাইকোপোডিয়াম, নাইট্রিক-অ্যাসিড, নাক্স-ভোম, সিপিয়া।
যখন জানতে পারবেন সে হোমিওপ্যাথি পছন্দ বা বিশ্বাস করে না তখন আপনি অনেকটা নিশ্চিত হতে পারেন এই ৬টি ঔষধের মধ্যে যে কোন ১টি তার ঔষধ হতে পারে। (আবার পূর্ণাঙ্গ কেস টেকিং এর ভিত্তিতে অন্য কোন ঔষধ হতেও পারে)।
রোগী, থিম, অভিজ্ঞান ও ঔষধ নির্বাচন:
সাথে থাকা রোগীর বন্ধুটি আমার পূর্ব পরিচিত ও আমার রোগী হওয়ায় সে জোর করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য ওকে নিয়ে এসেছে। রোগীর বন্ধু বলল স্যার ও হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে না, যেহেতু আমি আপনার কাছে ফলাফল পাই তাই ওকে বুঝিয়ে জোর করে নিয়ে এসেছি। ওর রোগটি বেশ জটিল অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে কোন কাজ হয়নি।
একটু ভালো করে দেখবেন। যদিও বন্ধুবর হিসেবী মানুষ তবুও টাকা পয়সা যা লাগে দেয়া যাবে। ওর টাকা পয়সার অভাব নাই। প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক।
প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক শোনার ফলে কেস টেকিং করার আগে জানতে আগ্রহ হলো সে কি করে!
রোগীর সাথে আলাপ প্রসঙ্গে জানতে পারলাম অডিট অফিসে কেরানীর চাকুরী করে। কিন্তু বাড়ি, জমি, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক! তবে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া নয় চাকরি করে অর্জন করেছেন। এত ছোট চাকুরী করে এত টাকা, গাড়ি বাড়ির মালিক হওয়ার কথা নয়।
মনে প্রশ্ন জাগলো তবে কি ঘুষ খায়! এক্ষেত্রে সরাসরি প্রশ্ন করা যাবেনা আপনি ঘুষ খান কিনা? তাহলে মাইন্ড করবে, স্বীকার করবে না।
মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞাসা করলাম দাদা নিশ্চয় আপনার চাকরিটা খুব ভালো। বাড়তি ইনকাম আছে!
রোগী হেসে বললো হ্যাঁ স্যার চাকরিটা খুব ভালো, যথেষ্ট বাড়তি ইনকাম আছে। এবার কনফার্ম হলাম সে ঘুষ খায়।
অভিজ্ঞান: হোমিওপ্যাথিতে ঘুষখোরদের জন্য দুটো ভালো ওষুধ আছে আর্সেনিক, লাইকোপোডিয়াম।
হোমিওপ্যাথি অবিশ্বাসকারী বা অপছন্দকারীদের তালিকায় থাকা ৬ টি ঔষধের মধ্যে যেহেতু আর্সেনিক নাই আছে শুধুমাত্র লাইকো আছে সুতরাং লাইকো-কে টার্গেট করলাম।
নিয়ম অনুযায়ী কেস টেকিং নিশ্চয় করার পূর্বে এই থিমটি পরীক্ষার জন্য কেস টেকিং এর নিয়মের বাইরে গিয়ে রসিকতা করে প্রশ্ন করলাম আপনার মেজাজ নিশ্চয়ই কড়া (রূক্ষ)। সে স্বীকার করবে- হ্যাঁ। আপনারা ভাবছেন কিভাবে বুঝলাম! মনে রাখবেন এই ৬ টি ঔষধের প্রত্যেকটির রোগীরাই প্রায় মেজাজী।
দর্শন ও অভিজ্ঞান বলে যারা সত্য এবং সুন্দর পছন্দ বা বিশ্বাস করে না তাদের মেজাজে সমস্যা থাকে। যথা: ধর্ম একটি সত্য সুন্দর বিষয় কিন্তু যারা ধর্ম পছন্দ বা বিশ্বাস করে না, পরীক্ষা করে দেখবেন এরা অধিকাংশই মেজাজী। অনুরূপ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান পৃথিবীর অন্যতম একটি সত্য সুন্দর বিষয় কিন্তু এটিও যারা বিশ্বাস করে না তাদেরও মেজাজে সমস্যা থাকে। উপরোক্ত ঔষধ সমূহের মেজাজ এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
এবার মূল কথায় আসলাম। কি সমস্যার জন্য এসেছেন?
রোগী বলল- আমার লিভারের সমস্যা। দীর্ঘদিন ভুগছি, পেটে প্রচুর বায়ু জমে। গ্যাস্ট্রিক আছে।
প্রশ্ন করলাম আপনি কি এজন্য খুব উদ্বিগ্ন থাকেন, মেজাজ খিটখিটে থাকে, মনের মধ্যে খুব ভয় কাজ করে, মনমরা হয়ে থাকেন।
রোগী উত্তরে বলল হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।
ভাবছেন অগ্রিম কিভাবে বুঝলাম!
অভিজ্ঞান: রাগ লিভারকে দুর্বল করে। লিভার আক্রান্ত হলে মনমরা থাকে। বলা যায় লিভারের বিশৃঙ্খলার কারণেই ভয়ের উৎপত্তি হয়।
এবার রোগীর কপালের দিকে লক্ষ্য করলাম কপালে ভাঁজ। ভাবছেন কপালে ভাঁজ হবে কেন!
অভিজ্ঞান: দীর্ঘদিন উদ্বিগ্ন বা উৎকণ্ঠায় থাকলে কপালে ভাঁজ পড়ে। (লাইকোর কপালে আড়াআড়ি ভাঁজ পড়ে)।
প্রশ্ন করতে পারেন পিত্তধাতু বা খিটখিটে হয় কেন? পেটে বায়ু জমে কেন?
অভিজ্ঞান: লিভারের কাজে বিঘ্ন ঘটার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, পিত্ত ধাতুগ্রস্থ হয়ে পড়ে ফলে সচরাচর পেটে বায়ু জমে।
প্রশ্ন করলাম- সমস্যা বাড়া কমা হয় কখন বা কিসে?
রোগী উত্তর দিল নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ফেল করা ও নির্বাচনে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করার কারণে হাতে টাকা পয়সা কমে যাওয়ার পর থেকেই রোগটা বেশি বেড়েছে।
গরম কিছু খেলে পাকস্থলীর সমস্যা ভালো লাগে। মিষ্টি খুব ভালো লাগে কিন্তু আপাতত গ্যাস্ট্রিকের জন্য খায় না।
প্রশ্ন করতে পারেন- এর সাথে রোগ বাড়া কমার কি সম্পর্ক?
অভিজ্ঞান:
লাইকোপোডিয়ামের রোগীদের ক্ষমতা বা অর্থ সম্পদ কমে গেলে রাগের লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি হলে রাগের লক্ষণ উপশম হয়।
পাকস্থলীর সমস্যা গরম কিছু খেলে উপশম হয়।
আমার বুঝতে বাকি রইল না রোগী লাইকোপোডিয়ামের।
মানসিক লক্ষণ: কৃপণ, ঘুষ খাওয়া, ভয়, উৎকণ্ঠা, খিটখিটে। হোমিওপ্যাথি অপছন্দ।
রোগ: লিভার আক্রান্ত, পেটে বায়ু জমা।
ফিজিক্যাল জেনারেল: গরম খাদ্যে উপশম। কপালে ভাঁজ।
হ্রাস-বৃদ্ধি
শুনে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম রোগী লাইকোপোডিয়ামের। হোমিওপ্যাথির যথানিয়মে কেস টেকিং করার পর রোগীর মধ্যে লাইকোপোডিয়ামের তাই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেল। নির্বাচিত হলো লাইকোপোডিয়াম।
সমস্ত তথ্য লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে, আপনারা বিরক্ত হবেন। শেষ করলাম।