হিপার সালফ কি?
সমনাম: লিভার অব সালফার, সালফুরেট অব লাইম।
উৎস:খনিজ(ক্যালসিয়াম সালফাইড ও গন্ধক এই দুটি রাসায়নিক সংযোগ প্রস্তুত)
প্রুভার: ডা.স্যামুয়েল হ্যানিম্যান।
ক্রিয়াস্থল: গ্লান্ড, চর্ম, শ্বাস-প্রশ্বাস
ঝিল্লীসমূহ, কিডনি, নাকের অস্থি, স্নায়ু সংলগ্ন টিসুসমূহ ক্রিয়া করে।
স্ক্রফলা ধাতু গ্রস্থ, গ্রন্থিস্ফিতি প্রবণ চর্ম পীড়া ব্যক্তিদের উপর ভালো কাজ করে।
হিপার সালফ কে আমরা কতিপয় মূল লক্ষণ ধরা চিহ্নিত করতে পারি যেমন,
*হাইপারসেন্সিটিভিটি-অতি অনুভূতি প্রবণতা।
রোগীর কি শরীর কি-মন সবদিক থেকেই এতটা অনুভূতিপ্রবণ যা আমরা তাকে অতিরিক্ত বা অতি অনুভূতিপ্রবণ বলে ব্যাখ্যা করতে পারি।
অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে থাকে হিপার সালফ.
উগ্র খাদ্যদ্রব্য যেমন টক-ঝাল ভিনেগার, চর্বি খেতে পছন্দ করে.
এছাড়াও অতি রাগী, অতি অভদ্র, অতি বদমেজাজি, অতি অনুভূতিপ্রবণ, অতি ঝগড়াটে, অতি গ্যাঞ্জাম প্রিয়, অতি দ্রুত মনের পরিবর্তন, অতি নোংরা কথা বলতে পারা, অতি উত্তেজনাবশত মারপিট করা, মেজাজটা রতি রুক্ষ, অতি উত্তেজিত.
এককথায় হিপার সালফ উত্তেজিত অবস্থায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে থাকে।
হিপার সালফ কেন হয়?
চরিত্রগত লক্ষণ:
রোগী খিটখিটে সামান্য কারণে রেগে যায়
যুক্তিহীনভাবে উৎকণ্ঠা গ্ৰস্ত।
দ্রুত ও ব্যস্ততার সাথে কথা বলে এবং পান করে।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল প্রকৃতির।
খুব বেচে বেচে খায় তারপর ও পেটের সমস্যা হয়
শরীরে ঘাম হয় এবং টক গন্ধ যুক্ত।
শরীরে ঘাম হওয়া সত্ত্বেও রোগের উপশম হয় না।
একটু ঠান্ডা হাওয়া লাগলে রোগে আক্রান্ত হয়, কাশি হয়,
রোগীর এই জন্য গরম ঘরেও গায়ের কাপড় খুলতে চায় না, জানালা দরজা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে চাই।
কাশিতে এবং হাঁপানিতে গলায় ঘরঘর সো সো শব্দ হয়।
রোগের উপশম লাভের আশায় মাথা নিচু করে বসে থাকে।
গলার ব্যথায় রোগী মনে করে যেন তার গলায় মাছের কাঁটা ফুটে আছে এবং তার স্পর্শ কাতর ব্যথা অনুভব করে।
প্রসাব অতি ধীরে হয় এবং তা ফোটা ফোটা হয়।
প্রসব করতে গেলে রোগীর অনেকক্ষণ পর্যন্ত বসে থাকতে হয় এর অন্যতম কারণ হলো মূত্রথলির দুর্বলতা।
হিপার সালফ
মানসিক লক্ষণ:
অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ, আবেগের বশে শুধুমাত্র ক্ষতিকারক ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম করে থাকে।
সন্ধ্যার দিকে অথবা রাতে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং তা থেকে আত্মহত্যার কথা ও ভাবে হিপার সালফ।
যে কোন ব্যাপারে অতি দ্রুত গতিতে মনের পরিবর্তন করে হিপার সালফ।
হিপার সালফ, তিলকে তাল বানাতে অতি পারদর্শী।
যে বিষয়টা আপনার কাছে সামান্য হিপার সালফ এর কাছে তা অতি বড় ব্যাপার, যে আঘাত আপনার কাছে সামান্য, হিপার সালফ এর কাছে অতি স্পর্শকাতর।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনার কাছে যদি হিপার সালফ এর রোগী আসে তাহলে আপনার সে আক্রান্ত স্থান দেখতে দেবেনা, স্পর্শ করতে দেবে না, এমনকি সে আক্রান্ত স্থান থেকে কাপড় সরাবেনা এই ভেবে সে আতঙ্কিত থাকে যে আক্রান্ত স্থানে যদি একটু বাতাস লাগে অথবা স্পর্শ করে তবুও সে ব্যথা অনুভব করে। এমনকি পাখার বাতাস পর্যন্ত সে চায়না,
আপনি ফু দিবেন সেখানেও তার ভয় পাবে। এমনকি দরজা-জানালা খোলা রাখে না,স্পর্শ কাতর অনুভূতিপ্রবণ হয়ে থাকে হিপার সালফ।
হিপার সালফ অতি অনুভূতিপ্রবণ ও অতি অ সহিংস হয়ে ওঠে, সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়, রোগীর ঝগড়া করে, তর্ক করে, গালিগালাজ করে, উত্তেজনাবশত মারপিট করে, জিনিসপত্র নষ্ট করে কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে তা আগুন ধরিয়ে দেয়।
(খেয়াল রাখবেন মানসিক উত্তেজনা বাড়ে প্রধানত সন্ধ্যার সময় এবং সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, পরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে)
(আপনার পরিবার, প্রতিবেশি, পরিচিত মহলে যদি হিপার সালফার রোগী থাকে তাহলে দেখবেন তারা অতিরিক্ত তর্ক করবে, ঝগড়াঝাঁটি করবে, মারপিট করবে গালাগালি করবে খারাপ ভাষা ব্যবহার করবে এবং তা অতি মাত্রায়)
কাতরতা: অতি শীতকাতর,
গরম কাতর
মায়াজম: সোরিক ,
সিফিলিটিক,
সাইকোটিক
টিউবারকুলার।
পাশ: ডানে “১ম”,
একপাশে, বামে “২”
ইচ্ছা: টক-ঝাল ,চর্বি,(গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর ভিনেগার ও আচার খেতে পছন্দ করে, এটি একটি অদ্ভুত লক্ষণ)
অনিচ্ছা: চর্বি (চর্বি খেলে হয় না )
ঘাম: ঘামে টক গন্ধ যুক্ত থাকে, ঘামলে ও রোগের উপশম হয় না।
জিব্বা ফাটল যুক্ত বাদামি বর্ণ বা হলদে দেখায়।
প্রসাব: অতি ধীরে হয় এবং তা ফোটা ফোটা হয়।
প্রসব করতে গেলে রোগীর অনেকক্ষণ পর্যন্ত বসে থাকতে হয় এর অন্যতম কারণ হলো মূত্রথলির দুর্বলতা।
দুর্গন্ধযুক্ত থাকে।
পায়খানা: ভুক্ত দ্রব্য যুক্ত কখনো কখনো পিচ্ছিল পায়খানা।
স্বপ্ন: আগুনের স্বপ্ন
অন্যান্য রোগ লক্ষণ এর সাথে হিপার সালফ সাদৃশ্য লক্ষণসমূহ:
গ্যাস্ট্রিক আলসার: যদি আলোচিত লক্ষণ সময়ের সাথে গ্যাস্ট্রিক আলসারের কোন রোগী যদি আপনার কাছে আসে এবং সে যদি এই অবস্থায় ভিনিগার ও আচার পছন্দ করে এবং তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তাহলে হিপার সালফ অবশ্যই উপকারী।
(নাক্স ভোমিকা, এসিড কার্বলিক, এনাকার্ডিয়াম ওরি, পেট্রোলিয়াম, আর্জেন্ট নাইট, আর্সেনিক, ক্রিয়োজোট, হাইড্রাসটিস, ফসফরাস, ইত্যাদি ভালো কাজ করে)
স্ফোটক”abscess” স্পর্শ কাতর অত্যান্ত ব্যথা, দপ-দপানি ব্যথা থাকে. রোগী এতটা স্পর্শকাতর’ হয় যে আপনাকে কখনই তা দেখতে দিবেনা ব্যথার ভয়ে।
যদি পুঁজ জন্মে যায় তাহলে হিপার সালফ প্রয়োগে পেকে ফেটে যায় যদি পুঁজ জন্মানোর আগে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা বসে যায়।
তবে লক্ষ রাখবেন যদি পুজ খুব গভীরে থাকে তাহলে নিম্ন শক্তি খুব ভালো কাজ করে।
(বেলেডোনা, মার্কসল, মাইরিস্টিকা, সাইলেসিয়া, ক্যালকেরিয়া হাইপো, লাইকোপোডিয়াম ইত্যাদি ওষুধ ভালো কাজ করে)
স্ফোটক পীড়ায় হিপার সালফ এবং সাইলেসিয়া মধ্যে বেশ মিল আছে পার্থক্য করে দিলাম,
উভয় ওষুধের মধ্যে ফোলা ভাব, শীতকাতর,ব্যথা ভাব,পুজ প্রবণতা বিদ্যমান তবে হিপার সালফার গ্লান্ড পুঁজ সঞ্চয় হঠাৎ এবং দ্রুত
অন্যদিকে
সাইলেসিয়া খুব ধীরগতিতে এবং সেরে ওঠা টাও ধীরগতিতে হয়ে থাকে”
সাইলেসিয়া আছে আত্মবিশ্বাসের অভাব,সাহসের অভাব, ভীরুতা, উৎকণ্ঠার জন্য কষ্ট পায় এবং জনসম্মুখে উপস্থিত হলে এটা বেশি প্রকাশ পায়।
অন্যদিকে হিপার সালফ সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য হলো স্পর্শকাতরতা যা বাতাসে অতিসংবেদনশীলতা প্রকাশ পায়”
ঠান্ডা কাশি: শরীরের কোন অঙ্গে সামান্য বাতাস, ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ লেগে কাশি শুরু হয়, রোগী কাশির সাথে ঘামে এবং কাশির সাথে ও কাশির আগে কান্না করে।
ঠান্ডা বাতাস টেনে নিল কাশি বৃদ্ধি পায়, অনাবৃত অংশে ঠান্ডা বাতাস ঠান্ডা লাগলে রোগ লক্ষণ এর বৃদ্ধি পায়।
কাশির আওয়াজ ঘড়-ঘড়,সো সো শব্দ হয়,
হিপার সালফ
রাতে কাশতে কাশতে বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করে সে মনে করে তার শ্বাস নিতে পারবে না”
(একোনাইট, স্পঞ্জিয়া,হিপার সালফ, এন্টিম টার্ট, ইপিকাক, কস্টিকাম, ব্রায়োনিয়া, ইত্যাদি কাশিতে ব্যবহৃত হয়)
হাঁপানি কাশি: যদি কোনো রোগী তে আপনি দেখেন যে বর্ষাকালে ভালো থাকে এবং স্বীত ও গ্রীষ্মকালে তার হাঁপানি কাশি বেড়ে যায় হিপার সালফে উপকার পাবেন।
ফ্যারিনজাইটিস ও টনসিলাইটিস: জিব্বার শেষ অংশে দাঁড়া দাঁড়া ফুসকুড়ি মত দেখা যায় এবং রস পড়ে, ফোলে এবং স্পর্শকাতর’ ব্যথা অনুভব করে।
টনসিল খুব ফলে এবং রোগী গলায় কাঁটা ফোটা ব্যাথ্যা অনুভব করে যা খুবই স্পর্শ কাতর হয়।
কানের পীড়া: পুয হওয়ার আগে কানে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্যথা থাকলে হিপার উপযোগী,
এই ধরনের পীড়ায় আপনি যদি বেলেডোনা, ক্যামোমিলা,পালসেটিলা প্রয়োগে উপকার না পান তাহলে ফিফার সালফ কে স্মরণ করতে পারেন
আমবাত : সবিরাম জ্বরে শীত অবস্থা বা আগে যদি আমবাত বের হয় তাতে যদি চুলকানি থাকে এবং স্পর্শকাতর হয় তাহলে অবশ্যই হিপার সালফ স্মরণ করতে পারেন।
গ্যাংগ্রিন: যদি স্পর্শকাতর’ ব্যথা অনুভব থাকে এবং পুঁজ জমে যায় এবং হেপার এর সাদৃশ্য লক্ষণ যদি থেকে যায় তাহলে হিপার সালফ উপকারী।
হিপার সালফ
এর কিছু অদ্ভুত লক্ষণ আলোচনা করা হল,
*সামান্য বিষয়ে তার মধ্যে তীব্র অনুভূতির প্রকাশ ঘটে, এই সময়ে অতি আবেগ প্রবণ হয়ে সে নির্দ্বিধায় খুন করতে পারে।
সন্ধ্যার দিকে এবং সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি আতঙ্ককর উৎকণ্ঠায় ভোগে এবং সে সময়ে সে আবেগ তাড়িত হয়ে নিজেকেও হত্যা করতে অর্থাত আত্মহত্যা করতে চাই
রাত 11 টা থেকে 12 টা প্রচন্ড কাশি হয়।
সামান্য আঘাত ওই স্থানটি পেকে যায়, সহজে সারেনা এমনকি ক্ষত এ পরিনিত হয়।
মধ্যরাতের আগে রোগী হঠাৎ করে লাফিয়ে ওঠে এবং উৎকণ্ঠায় পরিপূর্ণ হয় এবং সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করে,
রোগী ওই সময় অনুভব করে সে শ্বাস নিতে পারছে না।
হিপার সালফ এর আরো কিছু একক লক্ষণ,
তাড়াহুড়ো করে কথা বলে, খায় এবং পান করে।
সামান্য নড়াচড়াতেই ঘেমে যায়।
দেহের কোন অঙ্গ অনাবৃত্ত হলেই কাশি শুরু হয়।
ক্রনিক টনসিলাইটিস এবং সেইসাথে কানে কম শোনা।
গ্যাস্ট্রিক আলসার অবস্থায় ভিনিগার খাওয়ার প্রবল প্রবণতা
প্রচুর মল থাকা সত্তেও এবং নরম মল হওয়া সত্ত্বেও মল পথের সংকীর্ণতার জন্য মলত্যাগে কষ্ট পাওয়ার ব্যথা অনুভব।
আগুনের স্বপ দেখা
ক্ষতস্থান হতে হালকা করে মুতে দিল রক্ত বের হয়ে যায়
রাতে সমস্ত রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া
বৃদ্ধি: আক্রান্ত পাশে শুলে, ঠান্ডা বাতাসে, শরীরের কোন অঙ্গ অনাবৃত্ত রাখলে, আক্রান্ত স্থানে স্পর্শ করলে বৃদ্ধি পায়।
উপশম: গরমে বা শরীর আবৃত রাখলে।
পরবর্তী ওষুধ: একোনাইট,বেল, ব্রাইওনিয়া,মার্কসল,এসিড নাইট্রিক, স্পঞ্জিয়া, সাইলেসিয়া
ক্রিয়ানাশক: ক্যামোমিলা, সাইলেসিয়া, বেলেডোনা,
ক্রিয়া স্থিতিকাল:৩০-৫০ দিন।
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করবেন না