যে কোন জীব-জন্তু দংশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

যে কোন জীব-জন্তু দংশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

যে কোন জীব-জন্তু দংশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন?

যে কোন জীব-জন্তু দংশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল প্রভৃতি বিষাক্ত কীটপতঙ্গ দংশন জনিত ক্ষত ও বিষাক্ত ক্ষত সুমহের মধ্যে গন্য হয়। ইহাতে অত্যন্ত বেদনা জ্বালা ও স্ফীতি হইলেও জীবনহানী সংঘটিত হয় না। কিন্তু অধিক সংখক মৌমাছি, বোলতা বা ভিমরুল কর্তৃক দংশিত হইলে অথবা জিহ্বা, তালুমুল প্রভৃতি স্হানে দংশিত হইলে গলমধ্যে স্ফীত হইয়া শ্বাসরোধ হইবার উপক্রম হইতে পারে। কীটপতঙ্গাদি দ্বারা দংশিত হইলে প্রথমে ফরসেপস দ্বারা কীটের হুল তুলিয়া ফেলিয়া দিয়ে, ঐ স্হানে, লবন মিশ্রিত জলপট্টি লাগাইতে হয়। ভিজা মাটির প্রলেপ অথবা এক খন্ড পেয়াজ লাগালেও উপকার হয়। কেউ কেউ তামাক কিংবা হুক্কার জল লাগাইতে বলেন। স্পিরিট অফ অ্যামোনিয়া, লাইকার পটাসী অথবা টিংচার অফ লিডাম (১ভাগ মুল অরিষ্টঃ ৩ ভাগ জল) বাহ্য প্রয়োগে যন্ত্রণাদি শীগ্রই উপশমিত হইয়া থাকে। মশার দংশনেও ইহা ফলপ্রদ।

কীটপতঙ্গ দংশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সদৃশ ঔষধাবলী

কখনো কখনো স্হানীয় উপসর্গাদি ও ধাতুগত লক্ষণসমুহ বিশেষতঃ প্রকট হইয়া উঠে। সেরূপ ক্ষেত্রে লক্ষণ বিচারে নিম্নলিখিত ঔষধাবলী সাহায্য গ্রহণ করিতে হইবে।

ক্যাম্ফার-

অত্যন্ত বেদনাসহ জ্বর হইলে ইহার আগ্রাণে প্রায়শঃ তাহা প্রশমিত হয়।

একোনাইট-

স্ফীতিসহ প্রদাহ হইলে অর্ধ ঘন্টা অন্তর সেবন করিতে হইবে।

এপিস মেল-

বেদনা ও স্ফীতি নিবারণে একোনাইট অক্ষয় হইলে ২ঘন্টা অন্তর প্রযজ্য।

লিডাম পাল-

প্রথম হইতেই প্রযোজ্য। প্রদাহ প্রশমিত হইলেও বেদনা, আড়ষ্টতা এবং জ্বালা বর্তমানে থাকিলে ২ ঘন্টা অন্তর প্রযোজ্য। ইদুর, ছুচা, ভীমরুল, মৌমাছি , মশা, ডাস ইত্যাদি কীটপতাঙ্গ দংশনে লিডম অব্যর্থ।

এনথ্রাসিনাম-

কীট পতঙ্গাদির দংশনের একটি উত্তম ঔষধ।বোলতা, মৌমাছি দংশনের বেদনায় যখন রোগী ছটফট করিতে থাকে তখন এনথ্রাসিনাম সেবনেই যন্ত্রণা নিবারন করে।

হাইপেরিকাম-

হাতে, পায়ে বা আঙ্গুলে কোন জীব জন্তু কামড় দিলে আহত স্হানে বেদনা বা ক্ষত হইয়া ধনুষ্টংকারের উপক্রম হইলে হাইপেরিকাম অব্যর্থ।

এচিনেশিয়া-

ইদুর বা ছুচায় কামড়ালে আহত স্হানটি কার্বলিক এসিড দ্বারা পোরাইয়া দিবে। কার্বলিক এসিডের অভাব হলে লোহা গরম করিয়া আক্রান্ত স্হানে পোরাইয়া দেওয়া ভালো।

নেট্রাম মিউর-

মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল, বিচ্ছু ইত্যাদি কীট পতাঙ্গাদির দংশনে ইহা উপকারী।

মুখের মধ্যে দংশিত হইলে

লিডাম লোসান দ্বারা মুখ প্রক্ষালন করিতে হইবে।লিডাম প্রয়োগ সত্তেও প্রশমিত না হইয়া স্ফীতি, বেদনা ও যন্ত্রণা হইলে এপিস মেল বেদনা প্রশমিত হইয়া অতিশয় স্ফীতি ও তৎসহ লালাস্রাব হইতে থাকিলে মার্কুরিয়াস সেবন করিতে হইবে।

মধুমক্ষিকা দংশনজনিত পরবর্তি কুফলে

কার্বলিক অ্যাসিড, নেট্রাম মিউর, টেরিবিন্থিনা।

মশক, ডাঁশ, মক্ষিকা, ছারপোকা দংশনেপা ইরেথাম আহত স্থানে মূল অরিষ্ট লেপন করিতে হইবে।মশক দংশনে ডাঃ হিউজেস আহত স্থানে লিডাম ব্যবহারের নির্দেশ দান করিয়াছেন।

মশক, ডাঁশ, মক্ষিকা ও ছারপোকা দংশন নিবারণ করে

পাইরেথাম মূল অরিষ্ট ২ চামচ অর্ধ পাঁইট জল সহ মিশ্রিত করিয়া স্পঞ্জিং এর সাহায্যে দেহের উন্মুক্ত স্থানে মাখাইতে হইবে।

বিছুটি লাগিলে

পাইরেথাম মূল অরিষ্ট আহত স্থানে লেপন করিতে হইবে।

শিং মাছের কাঁটা ফুটিলে

এই কাঁটা ফুটিয়া অঙ্গুলিতে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। ইহাতে হাইপেরিকাম সেবন ও বাহ্য প্রয়োগ আশু যন্ত্রনা নিবারক। অত্যাধিক জ্বালা হইতে থাকিলে অ্যানথাসিন বা আর্স গরম জলে লবণ মিশ্রিত করিয়া তন্মধ্যে আহত স্থান ডুবাইয়া রাখিলে যন্ত্রণা নিবারিত হয়। গরম জল অসহ্য বোধ হইলে এপিস বা লিডাম ফলপ্রদ।

বিছা বা কাকড়া বিছা কামরাইলে

নিদারুন জ্বালাসহ আহতস্হান হইতে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ সর্বশরীরে ছড়াইয়া পেরিতেছে এইরূপ যন্ত্রণায় রোগী ছটফট করিতে থাকে, লিডাম সেবন ও তাহার মুল অরিষ্ট দুষ্টস্হানে তুলা দ্বারা  প্রয়োগ করিয়া অতি সত্বর যন্ত্রণার উপশম হইতে দেখা গিয়াছে চাকান্দা বা কালকেচন্দা নামক গাছ, বহু স্হানে আগাছা হিসাবে প্রথমে বৃষ্টিতে জন্মে, ইহার পাতা প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া ও লম্বা পাতা ও ডাটা রগড়াইয়া বা পাতার অভাবে শুস্ক ডাটা  ও উক্ত গাছ বাটিয়া দুষ্টস্হানে লাগাইয়া দিলে তৎক্ষণাৎ জ্বালার উপশম হয়। সহজ প্রাপ্য হিসাবে, লাউয়ের কচি পাতা বা ডগা লবন সহ একত্রে রগড়াইয়া লাগাইয়া দিলেও উপকার হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জিহ্বা চাচিয়া লালা লাগাইয়া দিলেও উপশম হয়।

যে কোন জীব-জন্তু দংশনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যেমন ইদুর ও বিড়াল কামড়াইলে

আক্রান্ত স্হানে পচা ঘা হইতে পারে, কখনো কখনো ইরিসিপেলাস হইয়া উঠে। লিডাম সেবন ও বাহ্যপ্রয়োগ ইহার শ্রেষ্ট ঔষধ।

ক্ষিপ্ত জন্তুর দংশন

ক্ষিপ্ত কুকুর অথবা শৃগাল বিংবা বিড়াল দংশন করিলে অথবা কোনপ্রকারে তাহাদিগের মুখনিঃসৃত লালা রক্তের সহিত মিশ্রিত হইলে জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া রোগ জন্মে এই রোগের লক্ষণভেদে বেলেডোনা, ক্যান্হারিস, ল্যাকেসিস, লাইসিন ইত্যাদি  ব্যবহৃত হয়।

সর্প দংশন

সর্প দংশ মাত্রই দংশিত স্হানের ৩-৪ ইঞ্চি উপরে ও নিচে মোটা সুতা, পাটের দড়ি, বা কাপর দিয়ে জোরে বাধিয়া দিবে। এই বন্ধনের ৩/৪ ইঞ্চি উপরে এরো একটি বাধন দিবে শক্ত করিয়া এবং যত শীঘ্র সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিবেন। কুকুরে কামরানো রোগীদের জন্য গব্য ঘৃত সুপথ্য।

সর্পদংশনের ঔষধ

বেলেডোনা, জেলসিমিয়ম, আর্সেনিক ইত্যাদি লক্ষণ ভেদে ব্যবহৃত হয়।

বোরিক রেপার্টরির সাহায্যে দংশনের সদৃশ ঔষধ নির্বাচন

BITES

Insects, snakes, dogs — Acet. ac., Am. c., Am. caust., Anthrac., Apis, Arn., Ars., Bell., Calad., Camph., Ced., Crot., Echin., Golond., Grind., Guaco, Gymnen., Hydroc. ac., Hyper., Kali perm., Lach., Led., Mosch., Pyr., Salag., Sisyr., Spirća, Trychnos.

Charcoal fumes, illuminating gas, ill effects — Acet. ac., Am. c., Arn., Bell., Bov., Coff., Op.

পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্হা

কোন প্রকার কীটপতঙ্গ কামড়াইলে তখন কষ্টিকাম আহত স্হানে লাগাইলে খুব শিগ্রই যন্ত্রণা নিবারন হয়।ভীমরুল, বোলতে, মৌমাছি,ডাস ইত্যাদি কামড়াইলে ঐ স্হানে আপাংগের পাতার রম ঘষিয়া দিলে তাৎক্ষনিক জ্বালা নিবারণ হয়। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল বা বেজী কামড়াইলে যত শিগ্রই সম্ভব কার্বলিক এসিড দ্বারা দুষ্ট স্হানটি পোড়াইয়া দিবে। কার্বলিক এসিড এর অভাব হলে লোহা গরম করিয়া পোড়াইয়া দেওয়া ভাল। কুকুর কামড়াইবার পর কুকুরটি মারিয়া ফেলবেন না। পাগলা কুকুর তিন চার দিনের বেশি বাচে না। কুকুর কামরাইয়া যদি সুস্হ শরিরে ১০-১২দিন বাচিয়া থাকে, আর কাউকে না কামরায় বা কোন পাগলামির লক্ষণ দেখা না যায়,তবে কুকুরের কামরে চিন্তার কোন কারণ নাই।পাগলা কুকুর কামড়াইলে সরকার অনুমদিত ইনজেকশন বা ব্যাকসিন এক মাত্র উত্তম উপায়। 

বিঃদ্রঃ- ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খেয়ে বিপদ ঢেকে আনবেনা।অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।

2