মায়াজম

মায়াজম

মায়াজম কী?

মায়াজম হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মায়াজম হল রোগের মূল কারণ এবং জীবাণু গুলো হল উত্তেজক কারণ।

যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হতে রোগ উৎপত্তি হয়, সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম বলে।

মহাত্মা হ্যানিম্যানের মতে- চির, অচির সকল রোগই মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়।

মায়াজম শব্দের অর্থ উপবিষ, দূষিত বাষ্প, দূষিত প্রভাব, ক্ষতিকর বাষ্প, সংক্রামক উপাদান প্রভৃতি। 

হ্যানিম্যান বলেছেন, চিররোগ সৃষ্টির মূল কারণ হলো, তিনটি চির রোগ-বীজ। এদের মধ্যে সোরিক মায়াজম হলো আদি রোগবীজ।

সকল রোগের মূল কারণ হলো সোরিক মায়াজম।

এমনকি প্রমেহ এবং উপদংশ নামক আদি রোগবীজের উৎপত্তিও সোরিক মায়াজম হতে, এজন্য সোরিক মায়াজমকে আদি রোগবীজও বলে।

বর্তমান পৃথিবীতে বংশ পরম্পরা মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের দেহের মধ্যে এই সোরিক মায়াজম কল্পনাতীত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই মায়াজম এখন অসংখ্য প্রকারের বিকৃতি, ক্ষত, বিশৃঙ্খলা ও নানা রকম যন্ত্রণাকর রোগের সৃষ্টি করছে।

মোটকথা, মায়াজম হচ্ছে এক ধরণের গতিময় দূষণ মাধ্যম, যাহা জীবদেহের মধ্যে একবার প্রবেশ করলে জীবনীশক্তির উপর প্রভূত্ব করে।

তারপর সেই ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে দূষিত করে, যার ফলে রোগীর দেহে একটি স্থায়ী রোগজ অবস্থা সৃষ্টি করে।

এই মায়াজম সম্পূর্ণরূপে এন্টি-মায়াজমেটিক ওষুধ দ্বারা দূরীভূত না করলে, রোগীর দেহে এই রোগবীজ সারাজীবন বিরাজ করবে এবং পরম্পরা প্রবাহমান থাকবে।

মায়াজম ক্ষেত্রে আমরা কিছু ভুল করি

যেমন-

১. সোরাকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সোরা কিন্তু মায়াজম নয়। একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সোরিক মায়াজমের দ্বারা সৃষ্টি হয়।

প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সোরিক।

২. সিফিলিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সিফিলিস কিন্তু মায়াজম নয়। একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সিফিলিটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্টি হয়।

প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সিফিলিটিক।  

৩. সাইকোসিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সাইকোসিস মায়াজম নয়। এটা মায়াজমেটিক অবস্থা, যা সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়।

প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সাইকোটিক।

৪. টিউবারকুলোসিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে টিউবারকুলোসিস মায়াজম নয়। এটা মায়াজমেটিক অবস্থা, যা টিউবারকুলার মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়। প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো টিউবারকুলার।

গ. মায়াজমকে আমি যেভাবে বুঝি:

ঘরের মেঝেতে পানি জমতে থাকলে একসময় সে স্থানটি স্যাঁতস্যাতে হয়ে যাবে। এই স্যাঁতস্যাতে অবস্থা দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে, সেখানে জীবানুর জন্ম হবে। এখানে জীবানু জন্মানোর অনুকুল পরিবেশকে বলা হয় ডায়াথেসিস। এই ডায়াথেসিস যে অদৃশ্য শক্তি সৃষ্টি করে তাকে মায়াজম বলি।

একটি উদাহরণ দিলে আরও বুঝতে সহজ হবে। যেমন-

যদি বলি গাজীপুরে ভালো কাঁঠাল হয়। আপনি গাজীপুরের যে কোন স্থানে কাঁঠালের বিচি লাগাবেন সেখানেই কাঁঠাল গাছ জন্মাবে এবং ভালো কাঁঠাল হবে। রাজশাহীতে প্রচুর আম হয়, আপনি রাজশাহীতে যে কোন স্থানেই আম গাছ বপন করেন না কেন, সেখানেই আম জন্মাবে।

যা আমার চাঁদপুরে হবে না, যদিও হয় তবে সেইখানের মতো হবে না। এটাই স্বাভাবিক।

তাহলে বলতেই পারি গাজীপুর কাঁঠাল ডায়াথেসিস, রাজশাহী আম ডায়াথেসিস। গাজীপুরের মাটি কাঁঠাল হবার উপযোগী আর রাজশাহীর মাটি আম হবার উপযোগী এটাই ডায়াথেসিস।

মায়াজম কত প্রকার?

মায়াজম (Miasm) প্রধানত তিন প্রকার, তা নিম্নে দেওয়া হলো-

১. Psoric: Psora বা কুন্ডয়ন অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তা উপবিষ নামে দেহাভ্যন্তরে সুপ্ত অবস্থায় সজীব থাকে।

এই সজীব Psora জীবানুই Psoric Miasm..এটা ব্যক্তির দেহে কেবলমাত্র ক্রিয়াগত পরিবর্তন সাধন করে, গঠনগত কোন পরিবর্তন আনয়ন করতে পারে না। মানসিক দিক দিয়ে আত্মরক্ষামূলক মনোভাবের।   

২. Syphilitic: যৌন ক্ষত অসম বিধানে চিকিৎসায় চিরস্থায়ী সিফিলিস উপবিষ নামে জীবানু দেহে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়।

এই Syphilis উপবিষই Syphilitic Miasm.. এটা ব্যক্তির দেহের গঠনগত পরিবর্তন সাধন করে, সকল প্রকার কোষকে বিধ্বস্ত করে,

ফলে ক্ষত বা আলসার হয়, স্রাব হয়, হাড়ের বিকৃতি ঘটে। মানসিক দিক দিয়ে ধ্বংসাত্মক মনোভাবের।  

৩. Sycotic: যৌন রোগ গনোরিয়া অসম বিধানে চিকিৎসায় সাইকোসিস উপবিষ নামে জীবানু সৃষ্টি হয়ে মানব দেহে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। এই বিষ মানব দেহে  অবস্থান নিলে বাহ্যিক ভাবে আঁচিল বা টিউমার প্রকাশ করে, এই Sycosis উপবিষই Sycotic Miasm.  

এটা ব্যক্তির দেহের গঠনগত পরিবর্তন সাধন করে। কোষকলার অসম বৃদ্ধি হয়, ফলে আঁচিল, টিউমার, মোটা বা স্থূল কোষকলার সৃষ্টি হয়।

মানসিক দিক দিয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাবের।  

মিশ্র মায়জম

রোগীর নিজে অর্জিত বা বংশগত পাওয়া একাধিক মায়াজমের সংমিশ্রণের ফলে রোগীর দেহে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেমন-

১. টিউবারকুলার: বাবা কিংবা মায়ের দেহে সোরিক ও সিফিলিটিক মায়াজমের মিশ্রন থাকলে, সন্তানের দেহে টিউবারকুলার দোষরূপে প্রকাশ পেয়ে থাকে।

(বাবা কিংবা মায়ের দেহে সোরিক+ সিফিলিটিক)= সন্তান টিউবারকুলার। 

২. সিউডো-সোরিক: বাবা কিংবা মায়ের কাছ থেকে সন্তান সোরিক মায়াজম পেয়ে থাকলে,

সেই সাথে সন্তান নিজ জীবনে অর্জিত সিফিলিটিক মায়াজমের সংমিশ্রণে যে অবস্থার সৃষ্ট হয় তাকেই সিউডো সোরা বলে।

(বাবা কিংবা মায়ের- সোরিক+ সন্তান নিজ জীবনে অর্জিত সিফিলিটিক)= সিউডো-সোরিক।

৩. স্ক্রফিউলা: বাবা কিংবা মায়ের কাছ থেকে সন্তান সিফিলিটিক মায়াজম পেয়ে থাকলে আর নিজের সোরিক অর্জন করলে এতে রোগীর লসিকাগ্রন্থি সমুহ আক্রান্ত হয়ে শরীর ও মনের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বর্ধনের পথ অবরুদ্ধ করে।

এই অবস্থাকে স্ক্রফিউলা বলে।

(বাবা কিংবা মায়ের- সিফিলিটিক + সন্তান সোরিক)= স্ক্রফিউলা। 

৪. রিকেট: সোরিকের সহিত সাইকোটিকের সংমিশ্রণের দরুণ পেশীগুলির শীর্ণতা দেখা দিয়ে শিশু শরীরের যে অবস্থা হয় তাকে রিকেট বলে।

(বাবা কিংবা মায়ের- সাইকোটিক + সন্তান সোরিক)= রিকেট।

৫. ক্যান্সার: ক্যান্সার এর অপকর্ষতা ও কোষকলার নিয়ন্ত্রণ-হীন অসীম বৃদ্ধি।

(সোরিক + সিফিলিটিক + সাইকোটিক + টিউবারকুলার)= ক্যান্সার।

৬. এইডস: এইডস ((AIDS)) স্ব-অর্জিত কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার (Acquired immuno- deficiency syndrome) অভাব দেখাদেয়।  

(সোরিক + সিফিলিটিক + সাইকোটিক)= এইডস।

৭. অন্যভাবে মিশ্র মায়জম-

১. সোরিক+ সাইকোটিক= সাইকোসোরা

২. সোরিক + সিফিলিটিক= টিউবারকুলার

৩. সিফিলিটিক + সাইকোটিক= সাইকোসিফিলিটিক

মায়াজম কিছু তথ্য

 মায়াজম রোগীর নিজে অর্জিত বা বংশগত পাওয়া মায়াজমের সদৃশ বিধানে চিকিৎসা না করলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়।

তা নিম্নে দেওয়া হলো-

১. রোগী নিজে সোরায় আক্রান্ত হলে, সেই সোরার চিকিৎসা সদৃশ বিধানে হলে রোগী নিজের জীবনে এর জন্য  তেমন কোন নতুন সমস্যায় ভোগবেন না। এমন কি তার পরবর্তি বংশের কেউ এর জন্য কোন প্রকার জটিলতায় ভোগবে না। 

২. রোগী নিজে সোরায় আক্রান্ত হলে, সেই সোরার চিকিৎসা বিসদৃশ বিধানে হলে, রোগী নিজে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন।

যেমন- উদরাময়, পেটফাঁপা, অজীর্ণ, চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ, চক্ষু ও নাসিকা হতে জ্বালাকর স্রাব নিঃসরণ। প্রদাহ ও জ্বালাযুক্ত স্বরভঙ্গ, যে কোন অঙ্গে জ্বালাযুক্ত প্রদাহ, হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মত জটিল রোগে ভোগে থাকেন।

৩. রোগীর বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে সোরার ইতিহাস পাওয়া গেলে, আর সেই সোরার চিকিৎসা সদৃশ বিধানে না করে থাকলে।

সেই ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে উদরাময়, পেটফাঁপা, অজীর্ণ, চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ, হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মত জটিল রোগে ভোগে থাকেন। 

৪. রোগী নিজে সিফিলিসে আক্রান্ত হলে, সেই সিফিলিসের চিকিৎসা সদৃশ বিধানে হলে রোগী নিজের জীবনে এর জন্য  তেমন কোন নতুন সমস্যায় ভোগবেন না। এমন কি তার পরবর্তি বংশের কেউ এর জন্য কোন প্রকার জটিলতায় ভোগবে না। 

৫. রোগী নিজে সিফিলিসে আক্রান্ত হলে, সেই সিফিলিসের চিকিৎসা বিসদৃশ বিধানে হলে, রোগী নিজে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন।

যেমন- পচনশীল যে কোন রোগ, দুর্গন্ধ পুঁজ ও রস নিঃসরণকারী চর্মপীড়া, দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্রাব ও প্রদরস্রাব। কর্ণ, নাসিকা ইত্যাদিতে ক্ষত ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। প্রস্রাব যন্ত্রের ক্ষত, গলক্ষত। মেরুমজ্জার ক্ষত, অস্থিক্ষয়, মুখে ক্ষত ও দুর্গন্ধ লালাস্রাব। পচন, উদরে ক্ষত, অন্ধত্ব, বধিরতা, উন্মাদ ইত্যাদি।

৬. রোগীর বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে সিফিলিসের ইতিহাস পাওয়া গেলে, আর সেই সিফিলিসের চিকিৎসা সদৃশ বিধানে না করে থাকলে। সেই ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্রাব ও প্রদরস্রাব, মুখে ক্ষত ও দুর্গন্ধ লালাস্রাব, পচন, উদরে ক্ষত, দাঁতে ক্ষয়, অন্ধত্ব, বধিরতা ও  উন্মাদ ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।

৭. রোগী নিজে গণোরিয়ায় আক্রান্ত হলে, সেই গণোরিয়ার চিকিৎসা সদৃশ বিধানে হলে রোগী নিজের জীবনে এর জন্য  তেমন কোন নতুন সমস্যায় ভোগবেন না। এমন কি তার পরবর্তি বংশের কেউ এর জন্য কোন প্রকার জটিলতায় ভোগবে না। 

৮. রোগী নিজে গণোরিয়ায় আক্রান্ত হলে, সেই গণোরিয়ার চিকিৎসা বিসদৃশ বিধানে হলে, রোগী নিজে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেমন-  দেহের সকল ছিদ্র পথে যন্ত্রণাদায়ক স্রাব, স্রাব সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা ও ব্যথা, যন্ত্রণাদায়ক স্বরভঙ্গ, হাঁপানি, হুপিং কাশি, হৃদপিন্ডের যন্ত্রণা ও স্নায়বিক দুর্বলতা। মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লি প্রদাহ, বাত, স্নায়ুশূল, উদরশূল, গর্ভস্রাব, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব, অর্শ-ভগন্দর, বসন্ত, আঁচিল, টিউমার হওয়ার প্রবণতা, বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার, অন্ডকোষ প্রদাহ ইত্যাদি।

৯. রোগীর বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে গণোরিয়ায় ইতিহাস পাওয়া গেলে, আর সেই গণোরিয়ার চিকিৎসা সদৃশ বিধানে না করে থাকলে।

সেই ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লি প্রদাহ, বাত, স্নায়ুশূল, উদরশূল, গর্ভস্রাব, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব, অর্শ-ভগন্দর, বসন্ত, আঁচিল,

টিউমার হওয়ার প্রবণতা, বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার, অন্ডকোষ প্রদাহ ইত্যাদি।      

১০. রোগী নিজে টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত হলে, সেই টিউবারকুলোসিসের চিকিৎসা সদৃশ বিধানে হলে রোগী নিজের জীবনে এর জন্য তেমন কোন নতুন সমস্যায় ভোগবেন না। এমন কি তার পরবর্তি বংশের কেউ এর জন্য কোন প্রকার জটিলতায় ভোগবে না।

১১. রোগী নিজে টিউবারকুলোসিসে আক্রান্ত হলে, সেই টিউবারকুলোসিসের চিকিৎসা বিসদৃশ বিধানে হলে, রোগী নিজে অনেক সমস্যায় ভুগে থাকেন।

যেমন- শুষ্ক জাতীয় দাদ, একজিমা, উন্মাদ, কৃমি, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, যন্ত্রণাবিহীন স্বরভঙ্গ, অন্ধত্ব।

দৈহিক শুষ্কতা, মেরুমজ্জার ক্ষয়, কার্বাংকল জাতীয় ফোড়া, শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা, গলা ও স্তনের মধ্যে স্থায়ীভাবে গ্রন্থিস্ফীতি, শয্যাক্ষত, পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্ষত, উন্মাদ, মাথাব্যথা, কোমর ব্যথা, সর্দি কাশি, টনসিল ও গলদেশের গ্লান্ড স্ফীতি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। 

১২. রোগীর বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে টিউবারকুলোসিসের ইতিহাস পাওয়া গেলে, আর সেই টিউবারকুলোসিসের চিকিৎসা সদৃশ বিধানে না করে থাকলে। সেই ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে শুষ্ক জাতীয় দাদ, একজিমা, উন্মাদ, অন্ধত্ব।

দৈহিক শুষ্কতা, মেরুমজ্জার ক্ষয়, শিশুদের বিছানায় প্রস্রাব করা, গলা ও স্তনের মধ্যে স্থায়ীভাবে গ্রন্থিস্ফীতি, শয্যাক্ষত, পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্ষত, উন্মাদ, কোমর ব্যথা, সর্দি কাশি, টনসিল ও গলদেশের গ্লান্ড স্ফীতি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।    

মায়াজম রোগীর কোন অবস্থায় নিয়ে ভাববো?

১. কোন রোগীর যে কোন রোগের চিকিৎসা করার পর, সে রোগী যখন পুনঃরায় একই রোগে আক্রান্ত হয়ে বারবার ফিরে আসে, তখন আপনাকে ভাবতে হবে এর কারণ কি? 

২. একই পরিবেশে বসবাস করে কেউ অসুস্থ হচ্ছে, আবার কেউ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করছে।

কেউ অসুস্থ হচ্ছে, আবার কেউ সুস্থ থাকছে। এর কারণ কি তা আপনাকে ভাবাচ্ছে।

৩. বংশগত কারণে কোন রোগ চিররোগে রূপান্তরিত হলে ঐ রোগের মুলোচ্ছেদ করতে আপনাকে বিচার করে দেখতে হবে যে,

উক্ত রোগের মূলে সোরিক, সিফিলিটিক, সাইকোটিক ও টিউবারকুলার কোন দোষটি বিদ্যমান।

৪. রোগীর চিকিৎসা চলছে ওষুধেও কাজ করছে, হঠাৎ নির্বাচিত ওষুধে কাজ করছেনা। তখন আপনাকে ভাবতে হবে এর কারণ কি?

৫. রোগীর চিকিৎসা চলছে ওষুধেও কাজ করছে তবে তা খুবই ধীর গতি সম্পূর্ণ। তখন আপনাকে ভাবতে হবে এর কারণ কি? কেনই বা এতো ধীর গতি?

৬. রোগীর চিকিৎসা চলছে ওষুধেও কাজ করছে, রোগীর বর্তমান কষ্টের উপশম হচ্ছে কিন্তু রোগী মানসিকভাবে প্রশান্তি পাচ্ছে না।

এই সময় আপনাকে ভাবতে হবে, রোগী যে মায়াজমে আক্রান্ত ওষুধটি সে মায়াজমেটিক কিনা? 

৭. একই সঙ্গে জন্ম হওয়া শিশু একজন দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে, একজন স্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে অন্যজন খুবই ধীর গতিতে বাড়ছে, আর একজন কিছটাু বৃদ্ধি হয়ে আর বাড়ছে না তখন আপনাকে ভাবতে হবে এর কারণ কি? 

৮. একই মায়ের গর্ভে জন্ম, একই সাথে বসবাস কিন্তু একজনে দুধ খেলে ভালো থাকে, আর একজনের দুধ খেলে পেট খারাপ করে,

অন্যজন দুধ খেতেই চায় না এই রকম হওয়ার কারণে আপনাকে ভাবাবে এইরূপ হচ্ছে কেন?

৯. একই মায়ের গর্ভে জন্ম, একই সাথে বসবাস কিন্তু একজন অনেক কথা বলে, আর একজনকে প্রশ্ন করলেও জবাব দিতে চায় না, সে কথা কম বলে।

একজন শান্ত, অন্যজন রাগী। একজন শীর্ণকায়, অন্যজন মেদপ্রবণ।

একজন মেধাবী, অন্যজনের মেধাকম এই সকল ক্ষেত্রে আপনাকে ভাবতে হবে এর কারণ কি?

১০. একই মায়ের গর্ভে জন্ম, একই সাথে বসবাস কিন্তু একজনের শরীরে প্রায় খোস পাঁচড়া লেগেই থাকে। আর একজনের বারবার মুখে ঘা হয় কিংবা শরীরের কোথাও আঁচড় লাগলেই তা ক্ষতে পরিণত হয়ে যায়।

অন্যজনের হাতে পায়ে আঁচিল, টিউমার, অর্শ আর একজনের প্রায় ঠান্ডালাগে যা সহজে সারে না। এইরূপ ব্যতিক্রমি সমস্যা দেখলে আপনাকে ভাবাবে এইরূপ কেন হয়?    

১১. রোগীকে সম্পূর্ণভাবে তরুণ কিংবা চিররোগ থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তির জন্য যাকে প্রয়োজন।

যা না হলে রোগীর রোগ থেকে স্থায়ীভাবে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়।

মায়াজম দোষ দূরিকরণের জন্য যে সকল ওষুধ ব্যবহৃত হয়: 

রোগীলিপি করার সময় রোগী কোন মায়াজমের তা নির্ণয় করতে হবে। কারণ রোগীর চিকিৎসার শেষের দিকে রোগীর উপর কোন মায়াজমের প্রভাব বেশি ছিল তা নির্ধরণ করা যায় না।  

এখন যত রোগী দেখি, প্রায় রোগীই মিশ্র মায়াজমের, একেক জন একাধিক মায়াজম নিয়ে আসেন। তাই রোগীর ওষুধ শুরু করার সময় রোগীলিপিতে রোগীটি কোন মায়াজমের তা লিখে রাখতে হবে। 

রোগীর চিকিৎসা করার সময়, রোগীর লক্ষণ সদৃশে যে ওষুধ সেটিই প্রয়োগ করতে হবে কিন্তু রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, রোগীকে সর্বশেষ যে ওষুধটি প্রয়োগ করা হলো সেটি রোগী যে মায়াজমের  সে মায়াজমের কিনা?  যেমন-  

সোরা: সালফার, সোরিনাম, ক্যাল্কে-কার্ব, লাইকোপডিয়াম ইত্যাদি। 

সাইকোসিস : থুজা, মেডোরিনাম, নেট্রাম সালফ, নাইট্রিক এসিড, স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া ইত্যাদি। 

সিফিলিস : মার্কুরিয়াস, সিফিলিনাম, অরাম মেট, নাইট্রিক এসিড, সাইলিসিয়া ইত্যাদি। 

টিউবারকুলার: টিউবারকুলিনাম বোভিনাম, টিউবারকুলিনাম ব্যাসিলিনাম, কেলি সালফ, ড্রসেরা, এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকাম, ইত্যাদি।

মায়াজম

৪টি মায়াজমকে বুঝানোর চেষ্টা করছি-

১. Psoric: Psora বা কুন্ডয়ন অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তা উপবিষ নামে দেহাভ্যন্তরে সুপ্ত অবস্থায় সজীব থাকে।

শরীরে চর্মরোগ ও মনের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।

২. Syphilitic: যৌন ক্ষত অসম বিধানে চিকিৎসায় চিরস্থায়ী সিফিলিস উপবিষ নামে জীবানু দেহে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়।

ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি করে। নি¤œগতি, গর্ত করা তার স্বভাব। তাই এইটিতে নীচের দিকে গর্ত দেখানো হয়েছে। 

৩. Sycosis: দেহে অবস্থান নিলে বাহ্যিক ভাবে আঁচিল বা টিউমার প্রকাশ করে। এর বৈশিষ্টই হলো উঁচু করা। তাই এইটিতে উপরে বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। 

৪. Tubercular: (সোরিক + সিফিলিটিক)= টিউবারকুলার এটা ব্যক্তির দেহের ক্ষয়মূলক বিধ্বংসী কার্যকলাপ সাধন করে এবং বিভিন্ন গøান্ডের স্ফীত ঘটায়। তাই এটিতে উপর ও নীচু দুই দিকে দেখানো হয়েছে।

৫. Cancerious: (সোরিক + সিফিলিটিক + সাইকোটিক +  টিউবারকুলার)= ক্যান্সারিয়াস। যখন কোন রোগীর দেহে সবকয়টি মায়াজম অবস্থান করে তখন রোগীর অবস্থা অত্যন্ত মারাতœক হয়ে পড়ে। এই অবস্থার প্রথম দিকে সাদৃশ্য বিধানে চিকিৎসা করতে পারলে রোগীকে পুর্ব স্বাস্থ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর যদি রোগী এই সমস্যার ২য় বা ৩য় গ্রেডে চলে যায় তখন আর এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হয় না।

2