পালসেটিলা

পালসেটিলা

পালসেটিলা (PULSATILLA) কি?

পালসেটিলা উইন্ড ফ্লাওয়ার নামক গাছড়া

সমনাম: উইন্ড ফ্লাওয়ার, এনেমন, পালসেটিলা

প্র্যাটেনসিস,মিডোএনেমন।

উৎস: উদ্ভিদজ

প্রুভার:ডা: স্যামুয়েল হ্যানিম্যান

কাতরতা: গরম কাতর (+++)

মায়াজম: সোরিক(+), সাইকোটিক (+), টিউবারকুলার (+)।

ক্রিয়াস্থল:মন,শিরা, শৈষ্মিক  ঝিল্লি, জিহ্বা, পাকস্থলী,উদর, স্ত্রী এবং পুরুষদের জনন যন্ত্র, মূত্র যন্ত্রসমূহ, শ্বাস যন্ত্র।

 গড়ন:

মার্জিত রুচিশীল চেহারা। পিঙ্গল কেশ।নীল চোখ, ফ্যাকাসে মুখশ্রী।

স্বভাব :

সহজেই হেসে ওঠে আবার সহজেই কাঁদে। স্নেহশীলা, বিনম্র ।

ভদ্র, নম্র, অভিমানী,সবার কথা শোনে,সবার মন পেতে চায়, সবার মন যুগিয়ে চলে, লোভী, ফেঁতকাঁদুনে।

মন:

শান্ত,ভীরু,সহজেই বশীভূত হয় এমন প্রকৃতির নারী

অস্থির চিত্ত,ধীর প্রকৃতি । অল্পেতেই কাঁদে। তার পক্ষে না কেঁদে রোগ বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব।

অভিমানী,স্বার্থপর। নিজের প্রিয় জিনিস কখনই কাকেও দিতে চায় না।প্রচুর কিছু পাবার বাসনা। লোভী মন।

সব সময়ই পরিবর্তনশীল মানসিকতা ।

আবেগবিহ্বল। ভূত ও অন্ধকারে ভয়। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি কাল্পনিক ভয়। বিয়ে করতে ভয়, সহবাসে ভয়।সহবাসকে এমনকি স্বামী স্ত্রীর স্বাভাবিক মিলনকেও অপরাধ বলে মনে করে।

ডকট্রিন অব সিগনেচার:

01- পালসেটিলার প্রথম কথা—পরিবর্তনশীলতা।

পরিবর্তনশীলতাই পালসেটিলার প্রধান লক্ষণ এবং শারীরিক ও মানসিক।শারীরিক পরিবর্তন শীলতা দেখতে পাওয়া যায় যে রোগ ক্রমাগত এক স্থান পরিত্যাগ করে ওপর স্থানে প্রকাশ পাচ্ছে বা এক মূর্তি ত্যাগ করে ভিন্ন মূর্তিতে প্রকাশ পাচ্ছে যেমন গলগন্ড ভালো হয়ে অন্ডকোষ প্রদাহ, কর্ণমূল ভালো হয়ে স্তন প্রদাহ ইত্যাদি। ব্যথা একবার হাতে, একবার পায়ে, একবার পেটে ,একবার পিঠে এভাবে ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে বেড়ায়।

02- পালসেটিলার দ্বিতীয় কথা—নম্রতা ও ক্রন্দনশীলতা।

পালসেটিলা রোগীর শরীর ঠিক যেমন নরম ও কোমল, তার মনটিও ঠিক তেমনি, কথায় কথায় অভিমান, কথায় কথায় চক্ষু দুটি অস্রুসিক্ত।রাগ যে সে করে না, তা নয় কিন্তু রাগ করে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে সে জানে না বরং কেঁদে মরে। কবির কল্পনায় পালসেটিলা গাছটি জন্মলাভ করেছে ভেনাস দেবীর অশ্রুপাত হতে।

03- পালসেটিলার তৃতীয় কথা—তৃষ্ণাহীনতা।

পালসেটিলা গাছটি মূলত পানিবিহীন মরু অঞ্চলে জন্মায়। বেঁচে থাকতে তার পানির খুব একটা দরকার হয় না। ঠিক পালসেটিলা রোগীরও পিপাসা বড়ই কম। এমনকি তার মুখ শুকনো হয়ে গেলেও পানির প্রয়োজন হয় না। ঠোঁট শুকনো হয়ে গেলে পালসেটিলার রোগী জিব্বা দিয়ে ঠোট ভিজে নেয়।

04- পালসেটিলার চতুর্থ কথা—গরমকাতর ও গরমে বৃদ্ধি।

পালসেটিলার রোগী গরম মোটেই সহ্য করতে পারে না।গরম ঘরে বা বদ্ধ ঘরে থাকতে সে কষ্ট বোধ করে, তার নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়, উত্তাপ তার নিকট একেবারেই অসহ্য। সেজন্য ঘরের দরজা জানালা খুলে দেয়। বাহিরের শীতল হাওয়া তার কাছে বড়ই আরাম ও সুখকর। পালসেটিলা রোগীর শরীরে হাত দিলে অত্যন্ত গরম মনে হয়। কিন্তু থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে কোন তাপই ওঠে না (সালফার, মেডো ও কার্বোভেজ)।

05- পালসেটিলার পঞ্চম কথা—নম্র, ভদ্র, বশীভূত।

পালসেটিলা গাছের ফুল ভারি সুন্দর দেখতে ও বৃন্ত থেকে নিচের দিকে ঝুলে থাকে। পালসেটিলা মহিলারাও ভারী, রমণীয়, কোমল স্বভাবের, লজ্জায় সব সময় মাথা নুইয়ে রাখে। নমনীয় অর্থাৎ পালসেটিলা মহিলারা নমনীয় ও রমণীয় দুইই।

06- পালসেটিলার ষষ্ঠ কথা—একাকীত্ব পছন্দ করে না।

পালসেটিলার গাছ একসঙ্গে অনেকগুলো জন্মে কখনো এককভাবে জন্মায় না যেন সঙ্গী ছাড়া একা থাকতে পারে না। পালসেটিলার ফুলগুলিও শুধু সুন্দর নমনীয়ই নয় থোকা-থোকা ভাবে ফুটে ওঠে। পালসেটিলা রোগীরাও দলবদ্ধ অবস্থায় থাকতে চায়। লোকসমাগম পছন্দ করে। তারা একাকীত্ব পছন্দ করে না।

07- পালসেটিলার সপ্তম কথা—স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের বিভিন্ন পীড়া।।

এই ঔষধের স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের উপর অপরিসীম ক্ষমতা আছে। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের ওপর এত ক্ষমতা বোধ করি অন্য কোন ঔষধে নাই।এই জন্য আমরা দেখতে পাই পালসে জরায়ুর শিথিলতা,ঋতুকষ্ট, ঋতুরোধ, স্বল্প ঋতু, অনিয়মিত ঋতু, অতি ঋতু, গর্ভস্রাব ইত্যাদি নানাবিধ উপসর্গ ইহাতে বর্তমান থাকে।

পালসেটিলা শীতকাতরও গরমকাতরও—

খুব খেয়াল করলে দেখা যায়, পালসেটিলা গাছের কান্ড তথা সারা গাছের ছালে সুক্ষ সুক্ষ লোম দ্বারা আবৃত থাকে,যা গাছকে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করে। পালসেটিলা রোগীরাও শীতকাতর হয় এবং শীতের হাত থেকে বাঁচতে হালকা চাদর গায়ে দেয়।পালসেটিলা রোগী তরুণ রোগে খুবই শীতবোধ করতে থাকে কিন্তু পুরাতন ক্ষেত্রে সে খুবই গরম কাতর। অতএব আমরা বলতে পারি পালসেটিলা শীতকাতরও বটে গরম খাতরও বটে কারণ পরিবর্তনশীলতাই তার বৈশিষ্ট্য।

রুব্রিক্স:

১- কোলে উঠতে, সোহাগ পেতে চায়।

২-   ভ্রান্তি, সব সময় সে একা।

৩-   ভ্রান্তি, পৃথিবীতে সে একা।

৪-   ভ্রান্তি, সে তার দায়িত্বে অবহেলা করেছে।

৫-   নৈরাশ্য, ধর্মীয় মুক্তির ব্যাপারে হতাশা ।

৬-   ভয়, মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়।

৭-   দুঃখ,  নীরব বাধ্যগত থাকার সাথে।

৮-   স্বার্থপরতা।

৯-   আত্মবিশ্বাসহীন , আজ্ঞাবহ,বাধ্যগত।

১০-   আত্মসমর্পণ প্রবণতা।

১১-   কান্না,  সান্ত্বনায় উপশম।

১২   সন্দেহপ্রবণতা থেকে রোগ।

১৩   বাল্যসুলভ।

2