আল্ট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে যত প্রশ্ন

আল্ট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে যত প্রশ্ন

আল্ট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে যত প্রশ্ন

প্রশ্ন : রোগনির্ণয়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাপক ভূমিকার কথা আমরা জানতে পাই।

বিভিন্ন রোগে রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তার নিচের পেট (লোয়ার এবডোমিন), ওপরের পেট (আপার এবডোমেন) বা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আলট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিতে দেখা যায়।

শুরুতে যদি একটু বলেন আলট্রাসোনোগ্রাফি বিষয়টি কী?

উত্তর : আলট্রাসাউন্ডের সময় আমরা একটি সাউন্ড বা শব্দ ব্যবহার করি। একটি ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর শরীরের ভেতরে শব্দ ঢুকাই।

শব্দ ঢুকিয়ে আমরা ছবি নেই। শব্দ ঢুকিয়ে বিভিন্ন ছবি দেখে এর মাধ্যমে প্যাথলজি বা রোগ নির্ধারণ করতে পারি।

প্রশ্ন : সাধারণত কী কী সমস্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাফি বা আলট্রাসাউন্ড করে থাকেন?

উত্তর : আজকাল তো মায়ের পেটের ভেতর থেকেই আলট্রাসাউন্ড করা শুরু হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত এটা চলতে পারে।

আমরা সব ক্ষেত্রেই সব বয়সের রোগীর রোগনির্ণয়ে এটা করতে পারি।

গর্ভাবস্থায় যে আলট্রাসাউন্ড করা হয়, সেখানে বাচ্চার অবস্থা, বাচ্চা ভেতরে কেমন আছে, তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কার্যক্রমের পদ্ধতি, হাড় এগুলো ঠিক আছে কি না দেখতে পারি।

তার মানে, গর্ভজাত সন্তানের অনেক তথ্য আমরা আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে জেনে নিতে পারি।

প্রশ্ন :

একজন গর্ভবতী মায়ের যে রুটিন আলট্রাসাউন্ড করতে হয়, সেটা কত দিন পরপর করা উচিত বলে মনে হয়?

উত্তর :কোনো বইয়ে আছে যে যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে আলট্রাসাউন্ড করারই দরকার নেই। আর কোথাও কোথাও বলা আছে, তিনটা ট্রাইমেস্টারে তিনবার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : গর্ভবতী মায়েদের আলট্রাসাউন্ড ছাড়াও বিভিন্ন রোগের বেলায়ও এর ব্যবহার আছে। সেগুলো কী?

উত্তর : একটা বাচ্চার মস্তিষ্ক আমরা আলট্রাসাউন্ড করতে পারি। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অবস্থা আমরা দেখতে পারি।

আর অন্যান্য আলট্রাসাউন্ড ঘাড়ের আশপাশে করতে পারি।

স্তনে করতে পারি, ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে করতে পারি, গাঁটে করতে পারি। ট্রান্স ভেজাইনাল আলট্রাসাউন্ড করতে পারি।

ট্রান্স ইসোফিসিউয়াল আলট্রাসাউন্ড করতে পারি। হার্টে করতে পারি। ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে পারি। কিংবা প্রয়োজনে শরীরের যেকোনো জায়গায় আলট্রাসনোগ্রাম করতে পারি।

প্রশ্ন :

স্তনের বেলায় আলট্রাসাউন্ডের কথা বলছিলেন আবার ম্যামোগ্রাফির কথাও আমরা শুনতে পাই। কোনটা কখন প্রযোজ্য?

উত্তর :

৪০ বছরের আগে আমরা আলট্রাসাউন্ডের পরামর্শ দিই। কারণ তখন গ্ল্যান্ডুলার টিস্যু অনেক বেশি থাকে।

০১. সে জন্য আমরা যদি ম্যামো করি, তাহলে এক্স-রে সাদা আসবে, লামটাও সাদা আসবে।

০২. সে জন্য আমরা রোগনির্ণয় করতে পারব না এবং বুঝতে অসুবিধা হবে।

০৩. সে জন্য ৪০ বছরের আগের মেয়েদের আমরা আলট্রাসাউন্ড করব এবং ৪০ বছরের পরে ম্যামোগ্রাফি করব।

এ ক্ষেত্রে আমি একটা কথা বলব, আমরা দুটো স্তনের আলট্রাসাউন্ড করব, দুটো স্তনের ম্যামো করব। কখনো একটা স্তন করতে বলব না।

দুটোর ছবিটা তুলনা করলে রোগনির্ণয় সহজ হয়।

প্রশ্ন : এ ছাড়া অনেক সময় আলট্রাসাউন্ড করতে গেলে লিখে দেওয়া হয় হোল এবডোমেন, লোয়ার এবডোমেন। এই বিষয়টা কেন?

উত্তর : হোল এবডোমেন ওপর ও নিচের পেট দুটোরই আলট্রাসাউন্ড করবে। লোয়ার এবডোমেনেকেবল পিত্তথলি বা পেলভিকাল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখাবে।

প্রশ্ন : আলট্রাসাউন্ড করার আগে কি কোনো প্রস্তুতির দরকার হয়?

উত্তর : হ্যাঁ, প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। যদি সে ওপরের পেট পরীক্ষা করে, তাহলে তাকে ছয় ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে।

আর যদি তলপেটের পরীক্ষা করে, তবে প্রস্রাবের পূর্ণ চাপ লাগবে। এ ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই।

এবং গর্ভকালীন অবস্থায়ও সে খেতে পারবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় আমরা তলপেটে দেখব।

তবে যদি কোনো রোগীর ওপরের এবং নিচের পেট দুটোই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়, তাহলে তাকে না খেয়েও থাকতে হবে। পাশাপাশি তার প্রস্রাবের চাপও লাগবে।

প্রশ্ন : গর্ভবতী মায়েদের আলট্রাসনোগ্রাম করলে গর্ভজাত সন্তানের কোনো সমস্যা হয় কী?

উত্তর : এখনো এ রকম কোনো বিষয় বলা হয়নি যে এটা ক্ষতি করছে। তবে আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি এবং অ্যানিম্যাল স্টাডিজে বলা হয়, টেরটোজোনিক ইফেক্ট বা বিভিন্ন ধরনের জন্মগত সমস্যা হতে পারে, ক্রমোজোমাল পরিবর্তন হতে পারে।

তাই আমরা এটাকে ঝুঁকি হিসেবে দেখব এবং ঘন ঘন করব না। প্রথম ট্রাইমিস্টারে কোনো কালার, ডপলার এসব করব না।

অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলট্রাসাউন্ড করব না।

আল্ট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে যত প্রশ্ন

প্রশ্ন : আসলে চিকিৎসক যখন পরামর্শ দেন, তখনই তো আলট্রাসাউন্ড করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় কী? আপনি বলছিলেন, বিশেষ করে জন্মগত ত্রুটি দেখা গেছে সেটা তো গুরুতর বিষয়। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোনো উপায় আছে কি?

উত্তর : রোগী কখনো নিজে নিজেও চলে আসে আলট্রাসনোগ্রাফি করতে । যেমন অনাগত সন্তান ছেলে না মেয়ে, মুখটা দেখতে কেমন—এসব দেখার আগ্রহ নিয়ে চলে আসে।

কিংবা ভিডিও করে রাখতে চায়।

তাহলে তো সাউন্ডটা অনেকক্ষণ ধরে রাখতে হবে। এবং এগুলো অনেকক্ষণ ধরে দেখতে হবে।

এসব ক্ষেত্রে তার জন্মগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই অনেকক্ষণ ধরে আলট্রাসনোগ্রাম না করা বা ঘন ঘন না করা ভালো।

প্রশ্ন : কোনো লাম থেকে এফএনএসি নেওয়ার সময় বা অন্য কোনো পরীক্ষার সময় আমরা যে রকম এক্স-রে বা সিটিস্ক্যান এসব বিষয়ের ব্যবহার করি, আলট্রাসনোর এ রকম ব্যব্হার আছে কি না?

উত্তর : অবশ্যই আছে। আলট্রাসাউন্ডের খরচ একটু কম। আমরা আলট্রাসাউন্ড দিয়ে সুপার ফেসিয়াল তো করতে পারি বটেই, তবে শরীরের ভেতরে অঙ্গ যেমন লিভার অন্যান্য লিম্ফনোট এগুলোতে আলট্রাসাউন্ডের সাহায্য নিয়ে এফএনএসি করতে পারি।

ওই সুনির্দিষ্ট জায়গাটা চিহ্নিত করে ওখান থেকে আমরা ফাইন্ড নিডেল এসপিরেশন করতে পারি। তাতে কম খরচ হয়।

2