লাইকোপোডিয়াম কি?
লাইকোপোডিয়াম ঔষধটি সত্যদ্রষ্ট ডা. হানেমানের নিজস্ব স্মৃতিসৌধ। ইহার কার্য্যকরী ক্ষমতা এতই গভীর ও এতই চিরস্থায়ী যে তাহা বর্ণনা করিবার ভাষার সর্ব্বদ্বাররুদ্ধ। অথচ এই ঔষধ নিত্য ব্যবহার্য, তবে ইহার ক্রিয়া বড়ই ধীর ও মৃদু। এই ঔষধের পীড়া সমূহ ধীরে ধীরে আরম্ভ হয় এবং রোগীর উন্নতি ও ধীরে ধীরে হয়। লাইকোর রোগী মিথ্যাবাদী, ঝগড়াটে কথা ঘুরিয়া ফিরাইয়া বলে নিজ কার্য্য সিদ্ধির জন্য। মোট কথা অসৎ প্রকৃতির রোগী সে পূর্ণ ভাবেই।
ডা. ক্লার্ক বলেন – লাইকোপোডিয়াম হল মেটেরিয়া মেডিকার এক স্তম্ভ।
উৎসঃ উদ্ভিজ।
প্রাপ্তিস্থানঃ ইউরোপ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র।
প্রুভারঃ ডা. হানেমান ১৮২৮ খ্রিঃ, হার্টলব, স্ক্রেটার, রুমেল,
গার্সডর্ফ, ওয়াহেল। পরবর্তীকালে ডা. হুবার,
প্রফেসর মার্টিন, ডা. রবিনসন, ডা. বেরিজ।
কাতরতাঃ প্রথম শ্রেনীর শীতকাতর, দ্বিতীয় শ্রেনীর গরমকাতর।
মায়াজমঃ সোরিক, সাইকোটিক, সিফিলিটিক ও টিউবারকুলার।
পার্শ্বঃ ডানপার্শ্ব, উপরে ডানপার্শ্ব নিচে বামপার্শ্ব, ডানপার্শ্ব হতে বামপার্শ্ব।
লাইকোপোডিয়াম নির্দেশক / চরিত্রগত লক্ষণ
১. অপরাহ্ন ৪ টা হইতে রাত্রি ৮ টা পর্যন্ত বৃদ্ধি।
২. গরম খাইবার স্পৃহা ও বায়ুর প্রকোপ।
৩. পেটের মধ্যে অতিরিক্ত বায়ু, এক গ্রাস খাইতে না খাইতেই
পেট বায়ুতে পূর্ণ হইয়া আসে। উদগার অপেক্ষা মলদ্বার
দিয়া বায়ু নিঃসরণে উপশম।
৪. তলপেটে বায়ু জমে, উর্দ্ধভাগশীর্ণ এবং নিম্নাংশ স্থূল।
৫. অত্যন্ত পেটুক, রাতে ঘুম হতে উঠে খাবার খায়।
৬. একমাত্র চর্মরোগ ছাড়া দাঁতের যন্ত্রণা, বাতের যন্ত্রণা
ইত্যাদি যাবতীয় যন্ত্রণা উত্তাপ প্রয়োগে উপশম।
৭. লাইকোর যাবতীয় পাকস্থলীর পীড়া গরম পানীয় ও গরম
খাদ্যে উপশম।
৮. একটি পা গরম, অপরটি ঠাণ্ডা।
৯. প্রস্রাবের সহিত লাল শর্করা বা ইটের গুড়ার মত তলানি
লাইকোর অন্যতম বিশিষ্ট লক্ষণ।
১০. দিনে যতবার প্রস্রাব করে তাহাপেক্ষা রাত্রে বেশি প্রস্রাব
করে।
১১. রাত্রে নাক বন্ধ হইয়া যাওয়া ইহার অন্যতম বিশিষ্ট
লক্ষণ, রাত্রে প্রায়ই “হা” করিয়া ঘুমায়।
১২. শিশু দিনে কাঁদে রাত্রে ঘুমায়, নিদ্রাভঙ্গে ক্রুদ্ধভাব।
১৩. মুখের মধ্যে সর্বদা থুথু জমিতে থাকে।
১৪. অনেক সময় বিনা কারণে লাইকোর শিশু অপরের
গাত্রে থুথু দিয়া থাকে।
১৫. ধ্বজভঙ্গ, অতিরিক্ত হস্তমৈথুন অথবা যৌনাচারের ফলে
লিঙ্গ ছোট, ঠাণ্ডা, শিথিল। সঙ্গমেচ্ছা খুব প্রবল কিন্তু
সহবাস করিবার ক্ষমতা নাই। আলিঙ্গনের সময় ঘুমিয়ে
পড়ে, দ্রুত বীর্যক্ষরণ।
১৬. যে সকল মেয়েরা ঋতুমতী হইবার বয়সেও ঋতুমতী হয়
না, স্তন ও ওঠে না। যৌনি এত শুষ্ক যে সহবাস সহ্য হয়
না, তাদের পক্ষে লাইকো চমৎকার ঔষধ। গর্ভবতী না
হইয়া স্তনে দুধ।
১৭. অর্শ, অর্শের বেদনা বসিলে বৃদ্ধি পায়।
১৮. সকল স্রাবে টক গন্ধ। সব কিছু টক স্বাদ মনে হয়।
১৯. মাথার চুল পড়ে যায়, কিন্তু দেহের অন্যান্য স্থানের চুল
গজায়। অকালে চুল পেকে যায়।
২০. হার্ট, লিভার ও কিডনির সমস্যায় নাকের পাতা
ওঠানামা করে।
মানসিক লক্ষণ
১. বুদ্ধিবৃত্তি প্রখর কিন্তু দৈহিকভাবে দুর্বল।
২. ভীরুতা, কৃপণতা ও নিঃসঙ্গ প্রিয়তা।
৩. সামান্য আনন্দে সে কাঁদিয়া ফেলে, এমন কি ধন্যবাদ
দিলেও কাঁদিয়া ফেলে।
৪. আত্মবিশ্বাসের অভাব, লোকসঙ্গে ভয় অথচ
নির্জনতাতেও ভয়, একা থাকতে ভয়, অন্ধকারের ভয়।
৫. স্মৃতিশক্তি বেশ দুর্বল, বানান লিখতে গিয়ে ভুল করে।
৬. প্রাতঃকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর বিমর্ষ ভাব ও
খিটমিটে মেজাজ থাকে।
৭. ঈর্ষাপরায়ণ, লোভী ও কলহপ্রিয়তা।
৮. প্রতিবাদ সহ্য করতে পারে না।
৯. গর্ভাবস্থায় সন্তান যেন লাফালাফি করিতেছে এইরূপ
বোধ।
১০. লাইকোর রোগী শক্তের ভক্ত এবং নরমের যম।
ইচ্ছাঃ মিষ্টি, ঝিনুক, মদ্য, গরম পানীয়।
অনিচ্ছাঃ কফি, তামাক, রুটি, মাংস, ঝোল।
বৃদ্ধিঃ বিকাল ৪টা হতে রাত ৮টা, কাপড়ের চাপে, গরমে
অথবা গরম ঘরে, সকালে ঘুম থেকে উঠলে।
হ্রাসঃ নড়াচড়ায়, মধ্যরাত্রের পর, গরম খাদ্য ও পানীয়
গ্রহনে, আবরণ খুলে ফেললে, ঠাণ্ডা মুক্ত বাতাসে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- ডা. এলেন বলেন – ক্যালকেরিয়া কার্ব, কার্বো ভেজ, ল্যাকেসিস এবং সালফারের পর লাইকো ভালো খাটে। কোন পুরাতন রোগ আরোগ্য করিতে হইলে লাইকো দেওয়ার পূর্বে অন্য সোরাদোষঘ্ন ঔষধ দিতে হয়।