মার্কসল কি?
মার্কসল ঔষধটি স্থূলপারা হইতে প্রস্তুত করা হয়। তাই যে পারা শক্তিকৃত অবস্থায় দুঃস্থ মানবের সীমাহীন কল্যাণকর, সেই পারার স্থূল অবস্থায় মানবের দেহটি পারা বিষে জর্জরিত হয়। আপনাদের স্মরণ থাকা উচিৎ কবিরাজি শাস্ত্রে অধিকাংশ ঔষধ এই স্থূল পারার সংমিশ্রণে প্রস্তুত তাই যখন কোন রোগী কবিরাজি
চিকিৎসা করাইয়া আমাদের নিকটে আসনে তখন আমাদের প্রধান কর্তব্য হয় ঐ কবিরাজ মহাশয়দের পারা দোষটিকে শোধন করা। আমাদের মেটেরিয়া মেডিকায় যে কটি প্রথম শ্রেনীর পলিক্রেষ্ট ঔষধ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম। মার্কসলকে সিফিলিসের রাজা বলা হয়। ডা. কেন্ট মার্কুরিয়াসকে মানব ব্যারোমিটার বলে অভিহিত করেছেন।
উৎসঃ খনিজ।
প্রুভারঃ ডা. হানেমান, ফ্রেডরিক হানেমান, গ্রস,
হার্টম্যান, রুমেল, ল্যাংহ্যামার।
কাতরতাঃ উভয়কাতর।
মায়াজমঃ সোরিক, সাইকোটিক, সিফিলিটিক,
টিউবারকুলার।
পার্শ্বঃ উপরে বাম পার্শ্ব, নিচে ডানপার্শ্ব।
অলটারনেট পার্শ্ব।
মার্কসল নির্দেশক / চরিত্রগত লক্ষণঃ
১. রাত্রে বৃদ্ধি, শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি, ঘর্মাবস্থায়
বৃদ্ধি।
২. মার্কসল রোগী অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত
ঠাণ্ডা কোনটাই সহ্য করিতে পারে না।
শীতকালে বা বর্ষাকালে ঠাণ্ডা লাগিয়া তাহার
সর্দি, কাশি দেখা দেয়, গ্ল্যান্ডগুলি ফুলিয়া ওঠে।
৩. দুর্বলতা এত বেশি যে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাঁপিতে
থাকে, জিহ্বা কাঁপিতে থাকে।
৪. যত ব্যথা তত ঘাম।
৫. নিদ্রাকালে মুখ হইতে লালানিঃসরণ ও খুব
প্রচুর পরিমাণে হইতে থাকে এবং এত প্রচুর
পরিমাণে হইতে থাকে যে বালিশ ভিজিয়া যায়।
৬. পিপাসা ও অত্যন্ত প্রবল, যেখানে পিপাসা নাই
সেখানে মার্কসল হইতে পারে না।
৭. জিহ্বা সরস, পুরু ও দাঁতের ছাপযুক্ত।
৮. দন্তশূলে মার্কসল যেম ধম্বন্তরি। মুখে ক্রমাগত
থুথু জমিতে থাকিলে এবং উত্তাপে উপশম
হইলে মার্কসল কখনও ব্যর্থ হয় না। মুখে ভীষণ
দুর্গন্ধ।
৯. দক্ষিণ পার্শ্ব চাপিয়া শুইতে অসুবিধা।
১০. পুঁজের উপর মার্কসলের ক্ষমতা প্রায়
অদ্বিতীয়। মনে রাখিবেন যেখানে পুঁজ জন্মে
নাই বা পুঁজ জন্মিতে বিলম্ব হইতেছে এরূপ
ক্ষেত্রেও মার্কসল সমধিক ফলপ্রদ।
১১. ঘা বা ক্ষত গভীরভাবে শরীরের মধ্যে
প্রবেশলাভ করিতে পারে না, উপর ভাগেই
ছড়াইয়া পড়িতে থাকে এবং ক্ষত হইতে স্রাব
কিছুতেই শুকাইতে চাহে না অর্থাৎ ক্রমাগতই
পুঁজ জমিতে থাকে।
১২. মার্কসলের যে কোন প্রদাহ ও ক্ষত উত্তাপ
প্রয়োগে কি শীতল প্রয়োগে কোনটিতেই
উপশম হয় না।
১৩. আমাশাতে পায়খানা হইবার পরও পেটের
বেদনা ও কামড় এবং মলদ্বারে কুন্থন চলিতে
থাকে।
চরিত্রগত লক্ষণঃ
১৪. পায়ের তলায় ঘাম হয় তাতে ঘা হয়।
১৫. যতটা জল পান করে তার চেয়ে প্রস্রাব বেশী
হয়।
১৬. বালক বা বালিকার স্তনে দুধ। স্ত্রীলোকের
ঋতুকালে প্রায়ই যোনিমধ্যে ফোঁড়া এবং স্তনে
দুধ দেখা দেয়।
১৭. খাদ্যের স্বাদ বা গন্ধের অভাব।
১৮. রক্তহীনতার সহিত হাত-পা ও মুখ ফুলিয়া
ওঠে, শোথ।
১৯. মার্কসলের ফোড়াকে ” ঠাণ্ডা ফোড়া ” আখ্যা
দেওয়া হয়।
২০. ক্রমাগত জননেন্দ্রিয় ঘাঁটিতে ভালবাসে।
২১. দাঁতের শীর্ষভাগ ক্ষয়ে যায়, গোড়া ঠিক
থাকে।
২২. শীত শীত বোধ হয় মলত্যাগের পর।
২৩. রাতে স্বপ্নদোষ হলে তাতে কাপড়ে রক্তের মত
দাগ পড়ে।
২৪. মাথায় চুল পড়ে যায়, টাক পড়ে।
২৫. জরায়ু ও স্তনের ক্যান্সারে মার্কসল প্রায়ই
প্রয়োজন হয়।
২৬. ডা. কেন্ট বলেন – হাতের কম্পন এমন হয় যে
রোগী কোন কিছু উত্তোলন করতে পারে না
অথবা খেতে এবং লিখতে পারে না।
মানসিক লক্ষণঃ
১. অস্হির, ব্যস্ত ও ত্রস্তভাব, আত্মহত্যা করিতে
চায়, খুন করিতে চায়, ক্রুদ্ধভাব। কথাবার্তায়
ক্ষিপ্রতা, বোকা হাসি, প্রবাস ভীতি।
২. বিষণ্ণতা, পাগল হবার ভয়।
২. উম্মাদ অবস্থায় থুথু, গোবর, বিষ্ঠা খাইতে
ভালবাসে।
৩. সন্তানকে আগুনে ফেলিয়া দেয়।
৪. সন্দেহযুক্ত, আবেগপ্রবণ, উম্মাদনা।
৫. অহংকারী, অত্যান্ত বদরাগী, স্মৃতিশক্তি দুর্বল,
অন্যমনস্ক।
ইচ্ছাঃ দুধ, রুটি, মাখন, তরল খাবার, মদ্য, মিষ্টি,
ঠাণ্ডা পানীয়।
অনিচ্ছাঃ কফি, মাংস, মায়ের দুধ, গরম খাবার।
বৃদ্ধিঃ রাত্রে, ঠাণ্ডা ও গরম,আর্দ্র শীতল
আবহাওয়ায়, ঘামে, গরম খাদ্য ও পানীয়,
গরম ঘরে, ডানদিকে চেপে শুলে।
হ্রাসঃ বিশ্রামে, যৌনসম্ভোগে, স্রাব নিঃসরণে এবং
কাঁদলে।
সর্তকতাঃ
১. ডা. কেন্ট বলেন – সোরাদোষ দুষ্ট রোগীদের
অনেকমাত্রা মার্কুরিয়াস দিওনা, উহা অপেক্ষা
গভীর ঔষধ অনুসন্ধান করিও। ইহা ঘন ঘন
প্রয়োগ করা উচিৎ নয়, এক শীতকালে দুবারের
বেশী নয়।
২. ডা. টি. কে. মূর বলেন – চর্ম শুষ্ক থাকা অবস্থায়
‘ মার্কারি ‘ কখনও দিবে না।
৩. মার্কসলের পরে বা পূর্বে সাইলিসিয়া ব্যবহার
করা উচিত নহে।
৪. মার্কসলের পরে বা পূর্বে প্রায়ই হিপার বেশ
উপকারে আসে।
**বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করবেন না**