গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কি?
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ আমাদের দেশে একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। রোগটি ভাইরাসজনিত হওয়ায় এলোপ্যাথিক ব্যবস্থায় এর কোন আরোগ্যকারী চিকিৎসা নেই।
মূলত সেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেয়া হয় ও হাইজিনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রতিরোধ ও হাইজিনের গুরুত্ব সর্বাবস্থায়ই নেয়া উচিৎ।
অনেকেরই হয়তো জানা নেই, হোমিওপ্যাথিতে এ রোগের অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা বর্তমান। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ রোগ বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- বাতা, জ্বরা, ক্ষুরপাকা, এঁসো, খরুয়া, তাপরোগ ও খুরাচল। দুই ক্ষুরওয়ালা সব প্রাণীরই এ রোগ হতে পারে।
এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ রোগ দেখা যায়।
তবে আমাদের দেশের গরুতে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
তাছাড়া আমাদের অর্থনীতির ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে গরু-উৎপাদনের সম্পর্ক বেশি থাকায়- আমরা মূলত গরুর ক্ষুরারোগ নিয়েই আলোচনা করবো।
বাতাসের সাহায্যে রোগের ভাইরাস দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এর ব্যাপারে আমাদের অধিক যত্নশীল ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
রোগের কারণ :
ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ নামক এক প্রকার ভাইরাস এ রোগ সৃষ্টি করে। সে কারণে ইংরেজিতে ক্ষুরা রোগকে এফ,এম,ডি বলে।
এ ভাইরাসের মোট ৭টি টাইপ রয়েছে। এগুলোর নাম এ, ও, সি, স্যাট-১, স্যাট-২, স্যাট-৩ ও এশিয়া-১।
বাংলাদেশে এশিয়া-১ টাইপের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
রোগ বিস্তার :
ক্ষুরা রোগ অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় কোনো এলাকায় এ রোগ দেখা দিলে একশত ভাগ পশুই তাতে আক্রান্ত হয়।
এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত প্রাণীর ফোসকা ফেটে অন্য প্রাণীর দেহে বিস্তার লাভ করে।
রোগাক্রান্ত পশুর লালা, শেষ্মা, প্রস্রাব, মল ও দুধের মাধ্যমে দেহ হতে বের হয়ে আসে। এসব পশুর খাদ্য, পানি, আবাসস্থলের দেয়াল, বাতাস ইত্যাদি কলুষিত করে। বাতাসের সাহায্যে এ ভাইরাস ৬০/৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গ্রামাঞ্চলে অনেকে সময় আক্রান্ত পশুকে দূর-দূরান্তের হাটবাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। তখন ভাইরাস ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। আক্রান্ত পশুর পরিচর্যাকারীর চলাচল এবং তার জামাকাপড়, জুতা ইত্যাদির সাহায্যে ও ভাইরাস বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ ভাইরাস বহনকারী ষাঁড় কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ। এসব ষাঁড় থেকে সংগৃহীত সিমেন কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করলে এ রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ :
১. প্রাথমিক অবস্থায় গবাদি পশুর জ্বর হয়। তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
২. জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতর এবং পায়ের মাঝখানে ফোস্কা উঠে, পরে ফোস্কা ফেটে লাল ঘায়ের সৃষ্টি হয়।
৩. মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। ঠোঁট নাড়াচাড়ার ফলে সাদাসাদা ফেনা বের হতে থাকে এবং চপচপ শব্দ হয়।
৪. ক্ষুরের ফোস্কা ফেটে ঘা হয় এবং পা ফুলে ব্যথা হয়। ঘা বেশি হওয়ায় চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। মাছি ওই ঘায়ে ডিম পাড়ে।
মাছির উপদ্রব ও রোগ জীবাণুর আক্রমণে ঘায়ের ব্যথায় পশুর জীবন বিষিয়ে ওঠে।
ফলে পশু এমনভাবে পা ছুঁড়তে থাকে যেন মনে হয় পায়ে কিছু লেগে আছে।
৫. গাভীর ওলানেও ফোস্কা হতে পারে যার ফলে ওলান ফুলে উঠে এবং দুধ কমে যায়।
৬. ছোট বাছুরের হৃৎপিণ্ড এ রোগে আক্রান্ত হলে কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মারা যায়।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি :
১. ক্ষুরা রোগ হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে পরিষ্কার শুকনা জায়গায় রাখতে হবে।
২. আক্রান্ত পশুকে অন্যত্র নেয়া বা বাইরের কোনো পশুকেও আক্রান্ত এলাকায় আনা ঠিক হবে না।
৩. আক্রান্ত পশুকে কচি ঘাস ও তরল খাবার যেমন, ভাতের ফেন বা জাউ ভাত খেতে দিতে হবে।
৪. আজকাল বাজারে গবাদি পশু পালনের জন্য মশামাছিরোধী নেট পাওয়া যায়, যার ব্যবহার উপযোগী হতে পারে।
৫. আক্রান্ত প্রাণীর পরিচর্যাকারীর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, হাত-পা এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস অবশ্যই জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
বাহ্যিক বা উপশমপ্রদায়ী চিকিৎসা: হোমিও প্যাথিক ক্যালেন্ডুলা ১০ মিলি আধা লিটার সহনীয় মাত্রার গরম পানিতে মিশিয়ে মুখ, জিহ্বা ও পা তথা ক্ষতস্থান ধুয়ে দিতে হবে। সরাসরি উক্ত ঔষধে তুলা ভিজিয়ে ক্ষতস্থানে ডলে লাগিয়ে দিতে হবে- এতে গরুর ঘা দ্রুত শুকিয়ে যাবে।
আভ্যন্তরীণ বা আরোগ্যকারী চিকিৎসা: হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণসাদৃশ্য ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতার ভিত্তিতে পরিচালিত আরোগ্যকারী চিকিৎসা।
কাজেই, যে কোনো চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ন্যূনতম শর্তগুলো বিবেচনা করতে হয়। তথাপি লক্ষণসাদৃশ্যে যে ঔষধগুলো বারংবার প্রয়োজন হতে দেখা যায়, তা হচ্ছে- মার্কসল,
আর্সেনিক এল্বাম, নাইট্রিক এসিড। চিকিৎসার শেষে বা মাঝখানে অনেক সময় ইন্টারকারেন্ট হিসাবে সালফার কিংবা থুজার প্রয়োজন হতে পারে।
নাছোড়বান্দা কেইসগুলোতে গরুকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করতে নোসোড ভেরিওলিনামের প্রয়োজন হয়।
ব্যথা বা ব্যাথার জন্য পা আড়ষ্ট হয়ে গেলে রাস-টক্সের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া মুখের ঘা’য়ের জন্য বোরাক্স ঘন ঘন প্রয়োজন হতে দেখা যায়।
বিঃদ্রঃ- ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খাবেন না।ডাক্তারের পরার্মশ ছাড়া ঔষধ খেয়ে বিপদ ঢেকে আনবেনা।অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন, সুস্থ থাকুন।